Friday, December 5, 2025

টানা তৃতীয় মাসের মতো অক্টোবরেও হ্রাস পেয়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়


ছবিঃ রপ্তানি কারক জাহাজ (সংগৃহীত)

স্টাফ রিপোর্টার | PNN: 

টানা তৃতীয় মাসের মতো অক্টোবর মাসেও বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয় কমেছে। এক বছরের আগের একই সময়ের তুলনায় এই হ্রাসের হার দাঁড়িয়েছে ৭.৪৩ শতাংশ। রপ্তানিকারকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক এবং ব্যাংক খাতের সংকটের কারণে সামনের মাসগুলোতেও রপ্তানি আয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি আশা করা যাচ্ছে না।

এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ ৩.৬৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যেখানে গত বছরের একই সময়ে এটি ছিল ৪.১৩ বিলিয়ন ডলার। তবে সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবরে রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার কমাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অতিরিক্ত শুল্ক আর ইউরোপের প্রধান বাজারে চীনের সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের অর্ডারও কমেছে। এছাড়া সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর কারণে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার জটিলতাও রপ্তানি হ্রাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম.এ. রহিম ফিরোজ বলেন, “আমাদের অর্ডার আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। বড় ক্রেতারাও অর্ডার কমিয়েছে। এর ফলে নিটিং ও ডাইং ইউনিটের কাজও কমে গেছে। আগামী নির্বাচনের আগে অর্ডারের প্রবাহ বাড়ার সম্ভাবনা নেই।”

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এর মধ্যে অর্ধেক পণ্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে যায় এবং একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যা মোট রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি ৮.৩৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহসভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী বলেন, “পোশাক রপ্তানি কমার তিনটি প্রধান কারণ—নির্বাচনকালীন অস্থিরতার আশঙ্কায় ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কের কারণে চীনা রপ্তানিকারকরা ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশ করার ফলে বাংলাদেশের অর্ডার কমে যাওয়া, এবং সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের কারণে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খুলতে না পারা।”

তিনি আরও বলেন,  “আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্রেতারা ঝুঁকি নিতে চাইছে না, ফলে অর্ডার কমানো হয়েছে। চীনের রপ্তানিকারকরা ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে, যা আমাদের বাজারকে কিছুটা সঙ্কুচিত করছে।”

অন্যান্য রপ্তানিকারকও জানিয়েছেন, সরকারের ঘোষণার পর অনেক আমানতকারী সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। ফলে গার্মেন্টস মালিকরা ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খুলতে পারছেন না। ব্যাংক পরিবর্তন করাও সহজ নয়।

ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে শুধু জুলাইতেই রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। পরের তিন মাসে টানা হ্রাস দেখা গেছে। তবে চার মাসের মোট রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ২.২২ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে দেশের মোট রপ্তানি হয়েছে ১৬.১৪ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৫.৭৯ বিলিয়ন ডলার।

অক্টোবর মাসে শুধু তৈরি পোশাক নয়, হিমায়িত ও জীবিত মাছের রপ্তানি কমেছে ১৩ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্য ১২ শতাংশ, এবং কৃষিপণ্য ১০ শতাংশ। একই সময়ে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ১৩ শতাংশ, পাট ও পাটজাত পণ্য ৭ শতাংশ এবং হোম টেক্সটাইল ১৪ শতাংশ।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন