- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য পৃথক দুটি নতুন নীতিমালা জারি করেছে সরকার। সোমবার (৪ আগস্ট) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়।
প্রথমবারের মতো এসব নীতিমালায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে তদবির বা সুপারিশকে ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য — সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি (বিডিবিএল)। অন্যটি তৈরি করা হয়েছে ছয়টি বিশেষায়িত ব্যাংক ও দুইটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য — বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন।
নীতিমালা অনুযায়ী, সিনিয়র অফিসার থেকে প্রিন্সিপাল অফিসার (পিও), সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও), সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ও উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) পর্যায়ের পদোন্নতিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, প্রশিক্ষণ, সততা, মেধা, চাকরির সন্তোষজনক রেকর্ড ও জ্যেষ্ঠতা বিবেচনায় নেওয়া হবে। পদোন্নতির জন্য অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রি বাধ্যতামূলক।
পদোন্নতির ভিত্তিকাল নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর (বাণিজ্যিক ব্যাংক) ও ৩০ জুন (বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান)।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, ফিডার পদে শেষ তিন বছরের যেকোনো এক বছরে নেতিবাচক বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) থাকলে বা ফৌজদারি মামলা চলমান থাকলে, কিংবা বিভাগীয় মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা যাবে না। লঘুদণ্ডের ক্ষেত্রে দণ্ডাদেশের মেয়াদ শেষে এক বছর, গুরুদণ্ডের ক্ষেত্রে দুই বছর পর্যন্ত পদোন্নতি নিষেধ থাকবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযোগপত্র প্রাপ্ত বা গ্রেপ্তার হলে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি স্থগিত থাকবে।
পদোন্নতির জন্য নির্ধারিত ১০০ নম্বরের মধ্যে এসিআরের গড় নম্বর ৪৫, শিক্ষাগত যোগ্যতা ১৫, চাকরিকাল ১৫, মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা ৪, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা ১০, দুর্গম এলাকায় কাজের অভিজ্ঞতা ১, শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে অর্জন ২, ও সাক্ষাৎকার ৮ নম্বর। পদোন্নতি পেতে মোট নম্বরের অন্তত ৭৫ পেতে হবে।
সাক্ষাৎকার বাধ্যতামূলক এবং নীতিমালায় অস্পষ্টতা থাকলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ব্যাখ্যা চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে ডিজিএম পদে পদোন্নতির জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটির সভাপতি হবেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এবং এজিএম পদে পদোন্নতির জন্য সভাপতি হবেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এমডি পদোন্নতি কমিটির সভাপতি থাকবেন।
সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় এ নীতিমালা কার্যকর হলে অধিক স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও ন্যায়নিষ্ঠা নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।