- ২১ অক্টোবর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে গত শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হলো জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এতে ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট সনদে স্বাক্ষর করলেও কয়েকটি দল এখনো সই করেনি।
জুলাই সনদে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলেও এখনো তিনটি বিষয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে—
সনদের আইনি ভিত্তি কী হবে,
গণভোটের সময় কখন হবে, এবং
ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন চলতি সপ্তাহের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পূর্ণাঙ্গ ও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দিতে চায়। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, তারা মনে করছে—যে কোনো প্রস্তাবই দেওয়া হোক না কেন, তাতে কিছু দল বা পক্ষ অসন্তুষ্ট হতে পারে। তবুও কমিশন চূড়ান্ত করার আগপর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাবে।
কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ৩১ অক্টোবর, তাই ২৪ অক্টোবরের মধ্যেই সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন,“সুপারিশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কিছু বলা ঠিক হবে না। কমিশন বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বসে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব তৈরি করছে, আমরা পরে মত দেব।”
জামায়াতে ইসলামী ও আরও সাতটি সমমনা দল গণভোট আগে এবং সংসদ নির্বাচন পরে করার দাবি তুলেছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন,“গণভোট আয়োজনের সময় ও সুযোগ আছে। তাহলে আগে গণভোট করতে আপত্তি কোথায়?”
অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো সনদে সই করেনি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানিয়েছেন,“কমিশনের সুপারিশ দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব সই করব কি না।”
সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ চার দল এখনো সনদে সই করেনি। তারা কমিশনে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে জানিয়েছে,
সংবিধানের চার মূলনীতি ও ১৫০(২) অনুচ্ছেদের পরিবর্তন অনুমোদন না করে এবং ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের উল্লেখ না থাকায় তারা সনদে স্বাক্ষর দিতে পারছে না। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন,“রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় পাওয়া মতামতের ভিত্তিতে এমন সুপারিশ তৈরি হবে, যাতে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।”কমিশনের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় আরও একটি বিকল্প ভাবা হচ্ছে—গণভোটে প্রশ্ন রাখা হবে, “আপনি কি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চান?” এবং “ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চান কি না?”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই সনদ এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর বাস্তবায়নের ধরন ও সময়ই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের রাজনীতির গতিপথ।