- ২১ অক্টোবর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
ইসরায়েলের ফুটবল ক্লাব মাকাবি তেল আভিভ ঘোষণা করেছে যে তারা যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিতব্য ইউরোপা লিগ ম্যাচে তাদের সমর্থকদের জন্য কোনো টিকিট গ্রহণ করবে না।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পূর্ববর্তী ভক্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও দলটি তাদের ভক্তদের স্টেডিয়ামে পাঠাবে না বলে জানিয়েছে ক্লাবটি।
সোমবার (২০ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে মাকাবি তেল আভিভ জানায়, “গত ঘটনার কঠিন শিক্ষা থেকে আমরা উপলব্ধি করেছি যে আমাদের ভক্তদের সুরক্ষা ও কল্যাণই সর্বাগ্রে।”
তারা আরও জানায়, “আমরা আমাদের সমর্থকদের মধ্যে থাকা চরমপন্থী অংশ থেকে বর্ণবাদ দূর করার জন্য কাজ করছি।”
বিবৃতিতে ক্লাবটি উল্লেখ করেছে, তাদের মূল দলে মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদি খেলোয়াড় রয়েছেন এবং তাদের সমর্থকগোষ্ঠীও জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন অতিক্রম করে একত্রিত।
রবিবার ইসরায়েলি পুলিশ মাকাবি তেল আভিভ ও হাপোয়েল তেল আভিভের ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই স্থগিত করে দেয়, “জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সহিংস দাঙ্গার আশঙ্কা” দেখিয়ে।
এই ঘটনাটি যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য অ্যাস্টন ভিলা বনাম মাকাবি তেল আভিভ ম্যাচে ইসরায়েলি সমর্থকদের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ওই নিষেধাজ্ঞাকে “ভুল সিদ্ধান্ত” বলেছেন, আর ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সা’আর একে “লজ্জাজনক ও কাপুরুষোচিত” আখ্যা দেন।
ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছিল, তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে ইসরায়েলি সমর্থকদের প্রবেশাধিকার দিতে চায়।
কিন্তু ইসরায়েলি পুলিশের ম্যাচ বাতিলের পর কিছু ব্রিটিশ এমপি প্রশ্ন তোলেন, সরকারের এমন হস্তক্ষেপ কতটা যুক্তিযুক্ত।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আয়ুব খান এক্সে লিখেছেন, “যারা এই ঘটনাকে ধর্মীয় ইস্যু বানাতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য প্রমাণ—বিশ্বের নজরে থাকলেও এই ভক্তরা সহিংসতাই বেছে নিয়েছে।”
অন্যদিকে লেবার এমপি রিচার্ড বারগন বলেন, “এই ঘটনাই প্রমাণ করে, নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। বার্মিংহামের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস পুলিশ জানায়, ম্যাচটিকে তারা “উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ” হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে, কারণ আগের ঘটনাগুলো—বিশেষত ২০২৪ সালের আমস্টারডামে আয়াক্স বনাম মাকাবি ম্যাচে সংঘর্ষ ও ঘৃণাজনিত অপরাধ—গুরুতর সহিংসতার ইঙ্গিত দেয়।
তারা জানায়, “আমাদের পেশাদার মূল্যায়নে এই ব্যবস্থা জননিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয়।”
গত বছর আমস্টারডামে প্রো-প্যালেস্টাইন সমর্থক ও মাকাবি ভক্তদের মধ্যে সংঘর্ষে ডজনখানেক মানুষ গ্রেপ্তার হয়।
মাকাবি সমর্থকদের বিরুদ্ধে তখন স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর হামলা, প্যালেস্টাইন সংহতির প্রতীক ধ্বংস এবং বর্ণবাদী ও গণহত্যামূলক স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করার পর, ইউরোপিয়ান ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউএফা(UEFA)-কে ইসরায়েলি দলগুলোর অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা।
অক্টোবরে ৩০ জনেরও বেশি আইনবিদ ইউইএফএ সভাপতি আলেকজান্ডার সেফেরিন-এর কাছে এক খোলা চিঠিতে লেখেন, “আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে ইউইএফএ’র উচিত নয় ইসরায়েলকে সুযোগ দিয়ে ‘স্পোর্টস-ওয়াশিং’-এ সহায়তা করা।”
মাকাবি তেল আভিভের টিকিট প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত তাই শুধু নিরাপত্তা ইস্যু নয়—বরং রাজনীতি, মানবাধিকার ও ক্রীড়া নীতির জটিল সংযোগের আরেকটি প্রতিফলন।