- ২১ অক্টোবর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির বায়ু দূষণ আবারও বিশ্বে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। হিন্দুদের আলোর উৎসব দীপাবলি উপলক্ষে আতশবাজি ফোটানোয় শহরজুড়ে দূষণের মাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে সুইস বায়ু মান পরিমাপক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার (IQAir)।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকালে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ৪৪২-এ পৌঁছায়—যা বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বরে দীপাবলির সময় আতশবাজির ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া, কারখানার নির্গমন ও কৃষিক্ষেতের আগুন মিলে দিল্লির বাতাসে ভয়াবহ মাত্রায় বিষাক্ত কণার উপস্থিতি দেখা যায়।
আইকিউএয়ার জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে শহরের বাতাসে PM2.5 কণার মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) বার্ষিক নিরাপদ সীমার ৫৯ গুণ বেশি ছিল।
ভারতের কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) জানিয়েছে, দিল্লির বায়ুর মান এখন “খুবই খারাপ” স্তরে, যেখানে AQI ৩৫০। উল্লেখ্য, ০ থেকে ৫০ পর্যন্ত AQI ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়।
গত সপ্তাহে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আংশিকভাবে আতশবাজির ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে “গ্রিন ক্র্যাকার” বা কম নির্গমনকারী আতশবাজি ব্যবহারের অনুমতি দেয়—রবিবার ও সোমবার সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টার জন্য।
কিন্তু বাস্তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে আতশবাজি ফোটানো হয়, ফলে বায়ুর মান দ্রুত নিচে নেমে আসে।
ভারতের পৃথিবী বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন দিল্লির বায়ুমান “খুব খারাপ থেকে খারাপ” অবস্থায় থাকবে। AQI সূচক ২০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে ওঠানামা করবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
শীত মৌসুমে ঠান্ডা বাতাসের কারণে ধোঁয়া, নির্মাণকাজের ধুলা ও কৃষিক্ষেতের পোড়া আবর্জনা শহরের উপরে ঘন কুয়াশার মতো আটকে থাকে। প্রায় দুই কোটি বাসিন্দা এ সময় শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসজনিত সমস্যায় ভোগেন।
পূর্বের বছরগুলোতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্কুল বন্ধ, নির্মাণকাজ স্থগিত এবং ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল।
গত নভেম্বরেও দিল্লি মারাত্মক ধোঁয়াশায় ঢাকা পড়ে, যেখানে এক রাতে AQI সূচক ১,৭০০ ছাড়িয়ে যায়—যা গ্রহণযোগ্য সীমার ১৭ গুণেরও বেশি ছিল।
আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার পাকিস্তানের লাহোরে AQI ছিল ২৩৪, যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে সরকার ইতোমধ্যে দূষণ কমাতে জরুরি পরিকল্পনা নিয়েছে—যার মধ্যে রয়েছে কৃষিক্ষেতের আগুন ও ধোঁয়াযুক্ত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং দূষিত এলাকায় অ্যান্টি-স্মগ গান ব্যবহার।
“বর্তমানে ভারতের পাঞ্জাব ও অন্যান্য এলাকা থেকে আসা বাতাসই আমাদের আকাশে দূষণ ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের বায়ুর মানকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।”
দীপাবলির উৎসব আনন্দের সঙ্গে শুরু হলেও, এবারও তা দক্ষিণ এশিয়ার কোটি মানুষের শ্বাস নিতে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।