- ২১ অক্টোবর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
জাপানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশটি পেল এক নারী প্রধানমন্ত্রী। দেশটির সংসদ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) আল্ট্রা-রক্ষণশীল রাজনীতিক সানায়ে তাকাইচিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছে। তিনি প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও রাজনৈতিক শিষ্য হিসেবে পরিচিত।
৪৬৫ সদস্যবিশিষ্ট নিম্নকক্ষে তাকাইচি পেয়েছেন ২৩৭ ভোট, যা তাঁকে জাপানের ১০৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিশ্চিত করেছে।
তাকাইচির জয় আসে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও ডানপন্থী জাপান ইনোভেশন পার্টি (জেআইপি)–এর মধ্যে সোমবার হওয়া এক শেষ মুহূর্তের জোট চুক্তির মাধ্যমে। তবে তাঁদের জোট সরকার এখনো সংসদে দুই আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে পিছিয়ে, ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবাকে প্রতিস্থাপন করছেন, যাঁর পদত্যাগের পর গত তিন মাস ধরে দেশটি রাজনৈতিক অচলাবস্থায় ছিল। জুলাইয়ের নির্বাচনে এলডিপি বড় পরাজয়ের পর থেকেই সরকার গঠনে জটিলতা তৈরি হয়েছিল।
তাকাইচির নেতৃত্ব জাপানের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক মোড় আনলেও, বিশ্লেষকরা বলছেন—এর মাধ্যমে দেশটি সামাজিক নীতি ও অভিবাসন বিষয়ে আরও ডানপন্থী অবস্থানে যেতে পারে।
তিনি নারীদের অগ্রগতি বা সমঅধিকার বিষয়ক নীতিতে বরাবরই অনাগ্রহী ছিলেন। তিনি সমলিঙ্গ বিবাহ, বিবাহিত দম্পতির পৃথক পদবি গ্রহণের অনুমতি এবং নারী উত্তরাধিকারীর রাজবংশে অন্তর্ভুক্তি—সব কিছুরই বিরোধিতা করেন। এর আগে এলডিপির দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী কোমেইতো পার্টি দুর্নীতি দমনে এলডিপির অনাগ্রহের কারণে জোট ত্যাগ করেছিল। কোমেইতো সাধারণত মধ্যপন্থী ও শান্তিবাদী অবস্থানের জন্য পরিচিত।
জেআইপি’র সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের সময় তাকাইচি বলেন, “এই মুহূর্তে জাপানের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি। স্থিতিশীলতা ছাড়া শক্তিশালী অর্থনীতি বা কূটনীতি কোনোটিই সম্ভব নয়।” জেআইপি নেতা ও ওসাকা গভর্নর হিরোফুমি ইয়োশিমুরা জানিয়েছেন, তাদের দল আপাতত মন্ত্রিসভায় কোনো পদ নেবে না, যতক্ষণ না তারা এলডিপির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হচ্ছে।
অর্থনীতির দিক থেকেও তাকাইচির নীতিকে “টাকাইচি ট্রেড” বলা হচ্ছে। সরকারব্যয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিতে টোকিওর নিক্কেই শেয়ার সূচক মঙ্গলবার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। তবে দেশের বিপুল ঋণভার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
নিম্নকক্ষের ভোটের পরপরই উচ্চকক্ষেও তাকাইচির প্রধানমন্ত্রী পদ অনুমোদিত হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি শপথ নেন। আগামী সপ্তাহে তাকাইচি তাঁর প্রথম নীতিগত ভাষণ দেবেন এবং এর পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ অন্যান্য আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। জাপানের রাজনীতিতে এটি নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়—তবে সেই সঙ্গে অনিশ্চয়তা ও বিতর্কের নতুন অধ্যায়ও খুলে গেল।