- ২১ অক্টোবর, ২০২৫
PNN নিউজ ডেস্ক | টাঙ্গাইল :
গণসংযোগের সময় অসুস্থ হয়ে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক (মোহন) মৃত্যুবরণ করেছেন। টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে সোমবার রাত ৮টার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের সিসিইউতে দায়িত্বরত চিকিৎসক মাহমুদুল হক জানিয়েছেন, হামিদুল হক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রবীণ এই রাজনীতিক আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ জানিয়েছেন, ১২ অক্টোবর দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে তিনি টাঙ্গাইল-৬ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দেন। এরপর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেন। সোমবার বিকেলে দেউলী ইউনিয়নে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব বিষয়ে সভায় বক্তব্য দেওয়ার পর পাশের মসজিদে নামাজ আদায় করেন। ফেরার পথে অসুস্থ বোধ করলে তাঁকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
ব্যক্তিজীবনে হামিদুল হক ছিলেন ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন (ভাষা-মতিন) এর ভগ্নিপতি। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে এবং তিন মেয়ে রেখে গেছেন। বর্তমানে তাঁর মরদেহ টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকার বাসভবনে রাখা হয়েছে। বড় ছেলে মিল্টন হক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাঁর দাফন করা হবে। জানাজার স্থান ও সময় পরে ঠিক করা হবে।
নাগরপুর উপজেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাবেক সভাপতি প্রভা রানী শীল বলেন, মৃত্যুর আগে দেউলী গ্রামে শেষ বক্তৃতায় মোহন ভাই আবেগঘন বক্তব্য দেন। তিনি নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলেন,
“আমার মাথার চুল সব পেকে গেছে। তাই মনে করবেন না যে আমি আপনাদের কাজ করতে পারব না। আমি মৃত্যুর আগপর্যন্ত জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।”
হামিদুল হক স্কুলছাত্র থাকাকালীন ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি টাঙ্গাইল জেলা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতার পর ভাসানী ন্যাপের রাজনীতিতে যুক্ত হন, পরে ভাসানী ন্যাপ বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয়। তিনি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালে সভাপতি হন এবং ১৭ বছর ধরে জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনীতির পাশাপাশি হামিদুল হক বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন টাঙ্গাইল নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সভাপতি এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক।
হামিদুল হকের মৃত্যুতে টাঙ্গাইলের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।