- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
দেশের শিল্প খাত গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট, ঋণপ্রবাহ হ্রাস, উচ্চ সুদের হার এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবে মৌলিক শিল্প থেকে শুরু করে সহায়ক যন্ত্রপাতি আমদানির হার কমে গেছে। ফলে উৎপাদন ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছাতে পারছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মৌলিক শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে এলসি খোলার হারও সমান হারে হ্রাস পেয়েছে, যা আগামী মাসগুলোতেও যন্ত্রপাতি আমদানি কম থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটের পেছনে বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার ‘ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট’-কে। এতে বেসরকারি খাতে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ জোগান সম্ভব হচ্ছে না। উদ্যোক্তাদের মধ্যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকায় নতুন বিনিয়োগের প্রবণতাও কমেছে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) এক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানি কমা অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক সংকেত। ঋণপ্রবাহ হ্রাসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চ সুদের চাপ—যেখানে চার বছর আগে ঋণের সুদের হার ছিল ৮-৯ শতাংশ, বর্তমানে তা ১২-১৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গার্মেন্ট শিল্প ছাড়া প্রায় সব খাতেই যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। বস্ত্র, ওষুধ, প্যাকেজিং, চামড়া এবং কৃষিযন্ত্র খাতে আমদানি ও এলসি খোলার হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি, যা সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যবর্তী কাঁচামাল—যেমন সিমেন্ট, রিরোলিং মিল, জাহাজ ভাঙা শিল্প ও লৌহ-ইস্পাত খাতের আমদানি হ্রাস শিল্প উৎপাদনের গতিকে আরও ধীর করবে। এর ফলে কর্মসংস্থান ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ব্যাংক খাতের সংস্কার ও সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে আনা না গেলে শিল্প খাতের এই দীর্ঘমেয়াদি মন্দা কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে।