- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
বাংলাদেশে একটি বৃহৎ জ্বালানি অবকাঠামো প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে, যেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বচ্ছতা ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, সরকার প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই ওমানভিত্তিক ওকিউ ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের (OQT) সাথে মহেশখালীতে একটি ভাসমান স্টোরেজ ও পুনঃগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (FSRU) নির্মাণের জন্য সরাসরি চুক্তির পথে হাঁটতে পারে।
প্ল্যাটস-এর ১৬ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মহেশখালীতে ৪.৫০ মিলিয়ন মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি FSRU নির্মাণের জন্য OQT-এর সাথে উন্নত পর্যায়ের আলোচনা চালাচ্ছে। ২০২৭ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটি দেশের ক্রমহ্রাসমান গ্যাসের মজুদ এবং এলএনজি আমদানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও এলএনজি অবকাঠামো সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত, তবে কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই উচ্চ-মূল্যের এবং কৌশলগত এই প্রকল্পে এগিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান প্ল্যাটসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে OQT-এর প্রস্তাবটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার কথা জানিয়েছেন এবং এটিকে এলএনজি আমদানি সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে, উদ্বেগের মূল কারণ হলো, OQT এই খাতের অভিজ্ঞ কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। এটি মূলত একটি পণ্য-ভিত্তিক ট্রেডিং কোম্পানি এবং FSRU বাস্তবায়ন বা পরিচালনার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা তাদের নেই। এমন একটি অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি চুক্তি করার বিষয়টিই সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, OQT-এর সাথে এই সম্ভাব্য সরাসরি চুক্তিটি সরকারের নিজস্ব নীতি লঙ্ঘন করতে পারে। এই বছরের শুরুতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের দ্রুত বর্ধন (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ বাতিল করে। এই আইন দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি খাতে দ্রুত-ট্র্যাক এবং দরপত্রবিহীন (non-tendered) ক্রয়ের অনুমতি দিত। আইন বাতিলের এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই অবকাঠামো খাতে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র এবং জবাবদিহিতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখেছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্বালানি খাত-সম্পর্কিত বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, যদি সরকার আনুষ্ঠানিক টেন্ডার ছাড়াই OQT-এর সাথে সরাসরি চুক্তি স্বাক্ষর করে, তবে এটি বিশেষ আইন বাতিলের উদ্দেশ্যকেই কার্যকরভাবে বাতিল করে দেবে। তিনি বলেন, “এটি শুধু স্বচ্ছতাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং ভবিষ্যতের বড় প্রকল্পগুলোর জন্যও একটি বিপজ্জনক নজির তৈরি করবে।”
ঢাকা-ভিত্তিক একজন জ্বালানি আইন বিশেষজ্ঞ বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, “এই ধরনের ব্যাকডোর আলোচনা—বিশেষ করে একটি তুলনামূলক অনভিজ্ঞ ট্রেডিং ফার্মের সঙ্গে—শুধু দেশের বিদ্যমান নিয়ন্ত্রক কাঠামোকেই অবহেলা করে না, বরং প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্জনযোগ্য ব্যয় সাশ্রয় ও উদ্ভাবনের সুযোগ থেকেও জনগণকে বঞ্চিত করে।”
এই চুক্তি যদি সত্যিই দরপত্র ছাড়াই সম্পন্ন হয়, তবে তা সরকারের স্বচ্ছতা ও সুশাসনের প্রতিশ্রুতির উপর বড় ধরনের প্রশ্ন চিহ্ন ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তথ্যসূত্র: প্ল্যাটস এল এন জি ডেইলি