- ০৪ অক্টোবর, ২০২৫
আদ্রে (চাদ), ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
(এই রিপোর্টে যৌন সহিংসতার গ্রাফিক বর্ণনা রয়েছে, যার মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিরুদ্ধেও সহিংসতা রয়েছে। কিছু পাঠকের কাছে এটি বিরক্তিকর মনে হতে পারে)
সুদানের পশ্চিম দারফুরের এল-জেনিনা শহর থেকে পালিয়ে আসা ২২ বছর বয়সী ইসলাম (ছদ্মনাম) আজও ভয়াবহ সেই রাতের কথা মনে করে কেঁদে ওঠেন। ২০২৩ সালের নভেম্বরে বিমান হামলায় তাদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। বেঁচে যাওয়ার পরও তাঁর দুঃস্বপ্ন শেষ হয়নি—র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) তাঁকে অপহরণ করে টানা দুই দিন ধরে ধর্ষণ করে।
“আমাকে মেরে ফেললেও ভালো হতো,” বলেন ইসলাম, যিনি এখন পূর্ব চাদের সীমান্ত শহর আদ্রের একটি শরণার্থী শিবিরে মায়ের সঙ্গে থাকছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া সেনাবাহিনী ও RSF-এর রক্তক্ষয়ী সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে প্রায় ১২ লাখ নারী ও শিশু চাদে আশ্রয় নিয়েছে।
আদ্রের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৪০ হাজার। কিন্তু এখন এই ছোট সীমান্ত শহরে ২ লাখ ৩৫ হাজার শরণার্থী অবস্থান করছে। তীব্র খাদ্য সংকট, পানির অভাব ও সীমিত মানবিক সহায়তার পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতা তাদের জীবনে নতুন আতঙ্ক হয়ে উঠেছে।
ইসলামের মতো অনেক নারী চাদে এসে দ্বিতীয়বার যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তিনি জানান, রোজগারের জন্য চা বিক্রি করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানির মুখে পড়তে হয়।
রোয়া (ছদ্মনাম), বয়স ১৮, এল-জেনিনা থেকে পালিয়ে আসেন ২০২৩ সালের জুনে। RSF-এর হাতে তাঁর বাড়ি পুড়ে যায় এবং পরিবারের কয়েকজন নিহত হন। এরপর স্কুলের আট সহপাঠীর সঙ্গে তাঁকেও অপহরণ করে ধর্ষণ করা হয়। এখন তিনি আদ্রে আশ্রয় নিয়েছেন, কোলের শিশুটির পিতা স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা—যিনি নিজেও তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন।
হানান (ছদ্মনাম) সম্প্রতি জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমি ছয় সন্তানের মা। যদি আবার সন্তান হয়, তাকে কীভাবে খাওয়াব?”
সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তিন বছরের হেলওয়া (ছদ্মনাম)-র জীবনে। আদ্রের এক শিবিরে প্রতিবেশীর হাতে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। এখন ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (UNFPA) হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে শুধু চাদেই ৪ হাজারের বেশি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। পূর্ব চাদে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার শিকারদের সহায়তার চাহিদা গত এক বছরে বেড়েছে প্রায় ২৮৮ শতাংশ।
তবে স্থানীয় প্রশাসন এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে। আদ্রে নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, শহর “নিরাপদ ও স্থিতিশীল”। অথচ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, শিবিরে নারীরা দিন দিন আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ছেন।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) জানিয়েছে, পূর্ব চাদে শরণার্থীদের জন্য চলতি বছরের প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র ২০ শতাংশ মিলেছে। ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুরক্ষা কর্মসূচি কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে সংস্থাটি।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, অপরাধীরা শাস্তি পাচ্ছে না, ফলে নারীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্থানীয় এক নারী নেতা ইসা দারা সালামা বলেন, “আমরা নারীদের সঙ্গে বৈঠক করি, তাদের অভিযোগ শুনি। সবচেয়ে বেশি উঠে আসে ধর্ষণের ঘটনা।”
আদ্রে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের মানসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্টেফানি লোইসো বলেন, “শরণার্থীরা ভেবেছিল এখানে তারা নিরাপদ থাকবে। কিন্তু বারবার সহিংসতার শিকার হওয়ায় তারা আশার আলো হারাচ্ছে। মানসিক আঘাতই তাদের সবচেয়ে বড় কষ্ট।”
হাজারো ভুক্তভোগীর মতো ইসলাম, রোয়া বা লাহামের কাছে মানবিক সহায়তা যথেষ্ট নয়। তারা চান জবাবদিহি, চান ন্যায়বিচার।
“টাকা দিয়ে কিছু হবে না। আমি ন্যায়বিচার চাই,” কাঁদতে কাঁদতে বলেন লাহাম, তাঁর ছোট্ট মেয়ে হেলওয়াকে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে।
তথ্যসুত্রঃ কেইটলিন কেলি | আল জাজিরা