Tuesday, October 14, 2025

গাজায় দুই মাস: এক মানবিক চিকিৎসকের চোখে নৃশংসতার চিত্র


ছবিঃ ১.৫ বছর বয়সী শিশু মুহাম্মদ জাকারিয়া আয়্যুব আল-মাতুক। (ছবি: আহমেদ জিহাদ ইব্রাহিম আল-আরিনি/আনাদোলু, গেটি ইমেজেস)

পিএনএন বিশেষ প্রতিবেদন:

আমি যখন গাজায় প্রবেশ করি, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি নিয়ম ছিল: আমি কেবল সাত পাউন্ড খাবার নিয়ে ঢুকতে পারব। প্রোটিন বার মেপে মেপে ওজন সীমার নিচে নামানোর চেষ্টা করতে করতে আমি স্বামীকে বলেছিলাম: “এটা কতটা ভয়ঙ্কর!” আমি একজন মানবিক সহায়তাকর্মী—তাহলে খাবারে সীমাবদ্ধতা কেন থাকবে? আমি এমন অনেক জায়গায় কাজ করেছি যেখানে চরম ক্ষুধা বিদ্যমান, কিন্তু এই প্রেক্ষাপটে যা সবচেয়ে ভয়াবহ তা হলো এর নিষ্ঠুরতা এবং এর পরিকল্পিত রূপ।

আমি গাজায় দুই মাস ছিলাম; সেখানে যা ঘটছে, তার ভয়াবহতা বর্ণনা করার কোনো ভাষা নেই। আর আমি এটা বলছি একজন শিশু নিবিড় পরিচর্যা বিভাগের ডাক্তার হিসেবে—যে তার কাজের অংশ হিসেবে শিশুদের মৃত্যুর মুখোমুখি হয়। আমাদের নিজেদের কর্মীদের মধ্যে এমন ডাক্তার ও নার্স আছেন যারা ক্ষুধার্ত অবস্থায়, ক্লান্ত শরীরে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তারা তাঁবুতে বাস করছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের পরিবারের ১৫, ২০ জন সদস্য হারিয়েছেন।

হাসপাতালে রয়েছে এমন সব শিশু, যারা বিমান হামলায় বিকলাঙ্গ হয়েছে—কারও হাত নেই, কারও পা নেই, কারও শরীরে তৃতীয় ডিগ্রির পোড়া ক্ষত। প্রায়ই পর্যাপ্ত ব্যথানাশক ওষুধ থাকে না। কিন্তু শিশুরা ব্যথার জন্য চিৎকার করছে না, তারা চিৎকার করছে—“আমি ক্ষুধার্ত! আমি ক্ষুধার্ত!” আমি শুধু শিশুদের কথা বলতেও চাই না, কারণ কারোই ক্ষুধার্ত থাকার কথা নয়। কিন্তু শিশুদের ক্ষুধা এক ভিন্নভাবে আপনাকে তাড়া করে বেড়ায়।

দুই মাসের কাজ শেষ হওয়ার পর আমি ফিরতে চাইনি। এমন অনুভূতি আমার প্রায় বিশ বছরের মানবিক কাজের জীবনে কখনো হয়নি। কিন্তু আমি লজ্জিত বোধ করছিলাম—আমার ফিলিস্তিনি সহকর্মীদের রেখে চলে যাচ্ছি বলে, যারা আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর ও সহানুভূতিশীল মানুষের মধ্যে অন্যতম। আমি লজ্জিত ছিলাম একজন আমেরিকান হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে—যে আমরা এমন কিছু থামাতে পারিনি যা স্পষ্টতই গণহত্যা।

মনে আছে, যখন আমাদের বাস বাফার জোন ছেড়ে বের হচ্ছিল, জানালার এক পাশে দেখছিলাম রাফাহ—যা ছিল কেবল ধ্বংসস্তূপ; অন্য পাশে সবুজে ভরা ইসরায়েল। গেট পেরোনোর পর প্রথম যা দেখলাম—একদল ইসরায়েলি সৈনিক, টেবিলে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছে। জীবনে কখনো এত বমি ভাব হয়নি—এক টেবিল ভর্তি খাবার দেখে।

আকসা দুররানি একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ এবং ডক্টরস উইদআউট বর্ডারস ইউএসএ-এর বোর্ড সদস্য, যার প্রায় বিশ বছরের মানবিক প্রকল্পে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। (প্রতিবেদনটি সংগ্রহ করা হয়েছে Humans of New York থেকে)

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন