- ০৪ অক্টোবর, ২০২৫
নুসরাত জাহানঃ PNN
একটি মনোমুগ্ধকর জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা, যাকে সাধারণভাবে “ব্লাড মুন” বা “রক্তচাঁদ” বলা হয়, ২০২৫ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর রবিবার রাতে সারা বিশ্বের পর্যবেক্ষকদের মুগ্ধ করতে আসছে।
ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষ এই বিরল দৃশ্য দেখার সুযোগ পাবেন। পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ার কারণে চাঁদ একটি রহস্যময় লাল বা তামারঙের আভা ধারণ করবে। এটি হবে ২০২২ সালের পর দীর্ঘতম সম্পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ, যার মোট ছায়ার সময়কাল হবে প্রায় ৮২ মিনিট।
চন্দ্রগ্রহণ ঘটে যখন পৃথিবী, চাঁদ এবং সূর্য একটি নির্দিষ্ট রেখায় অবস্থান করে, যেখানে পৃথিবী সরাসরি সূর্য এবং চাঁদের মধ্যে অবস্থান করে। পৃথিবী সরাসরি সূর্যালোক চাঁদের পৃষ্ঠে পৌঁছাতে বাধা দেয়, ফলে চাঁদ পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে যায়। এই সময় চাঁদের লালাভ আভা দেখা যায় যা “রোইলি স্ক্যাটারিং” নামে পরিচিত একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার কারণে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল নীল রঙের ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলিকে ছেদ করে ফেলে, আর লাল ও কমলা তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলি বাঁকা হয়ে চাঁদের পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়।
চন্দ্রগ্রহণের পুরো ঘটনা প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা ধরে চলবে, এবং পর্যবেক্ষকের অবস্থানের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন পর্যায় দেখা যাবে। সবচেয়ে নাটকীয় পর্যায় হলো “সম্পূর্ণতা” বা টোটালিটি, যখন চাঁদ সম্পূর্ণরূপে পৃথিবীর অন্ধকারতম ছায়ায় ঢেকে যায়।
সৌরগ্রহণের মতো নয়, চন্দ্রগ্রহণ সম্পূর্ণ নিরাপদে নগ্ন চোখে দেখা যায়। এটি দেখার জন্য কোনো বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই। তবে চাইলে দূরবীন বা ছোট একটি টেলিস্কোপ ব্যবহার করে চাঁদের পৃষ্ঠের বিশদ দৃশ্য দেখা যেতে পারে।
৭ই সেপ্টেম্বরের এই চন্দ্রগ্রহণ ঐতিহ্যবাহী “কর্ণ চাঁদ” এবং ভারতীয় ক্যালেন্ডারে “পিতৃ পক্ষ” শুরু হওয়ার সময়ের সাথে মিলে যাচ্ছে। তাই এটি কেবল বৈজ্ঞানিক কৌতূহলের জন্য নয়, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
এই মহাজাগতিক ঘটনা আমাদের সৌরজগৎ এবং মহাবিশ্বের অদ্ভুত সৌন্দর্যের সাক্ষী হওয়ার এক বিরল সুযোগ। জ্যোতির্বিজ্ঞানপ্রীতিরা আকাশের অস্পষ্ট স্থান এবং কম আলো দূষণের স্থান বেছে নিয়ে এই চমকপ্রদ দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।