- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
রাঙামাটি – রাঙামাটিতে কাঠ ও মাছের পর সবচেয়ে বড় ব্যবসা হিসেবে গড়ে উঠেছে বাঁশের বাণিজ্য। প্রতিবছর এই অঞ্চলে শত কোটি টাকার বেশি বাঁশের ব্যবসা হয়, যার মাধ্যমে সরকারও কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাঁশভিত্তিক শিল্পায়ন ও সুশৃঙ্খল রপ্তানির ব্যবস্থা গড়ে তুললে এটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে পরিণত হতে পারে।
জেলার বাঘাইছড়ি, কাউখালী ও নানিয়ারচর উপজেলা থেকে প্রতিবছর আনুমানিক ১ কোটি ৮০ লাখ বাঁশ আহরণ করা হয়। বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী, রাঙামাটি সদর ও কাপ্তাই উপজেলাতেও বাঁশ উৎপাদন হয়। তবে বনভূমি হ্রাস ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে উৎপাদন কমায় সাম্প্রতিক সময়ে আহরণের পরিমাণ প্রায় দুই কোটির নিচে নেমেছে। ব্যক্তি উদ্যোগে বাঁশের বাগান গড়ে তোলায় কিছুটা উত্পাদন বেড়েছে।
রাঙামাটি বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সৃজিত বাঁশ বাগান থেকে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৪৫৭টি বাঁশ আহরণ করা হয়েছে। প্রধান প্রজাতি হলো মুলি, ওরা, মিতিঙ্গা, ডুলু, ফারুয়া ও বাইজ্জা, যার মধ্যে মুলি বাঁশ সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। সরকার প্রতি বাঁশ থেকে ১ টাকা ৪০ পয়সা রাজস্ব আদায় করে।
বাঁশ বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কুতুকছড়ি বাজার গড়ে উঠেছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা বাঁশ কেটে হাটে নিয়ে আসেন। প্রতিটি বাঁশ আকার ও জাতভেদে ১৫ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। প্রতি মৌসুমে কুতুকছড়ি হাট থেকে কয়েকটি ট্রাকে করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, ঢাকা ও অন্যান্য জেলায় বাঁশ পাঠানো হয়, যেখানে প্রায় অর্ধকোটি টাকার বাণিজ্য সংঘটিত হয়।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেড় শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে জাতীয় চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখলেও পাহাড়ে বাঁশভিত্তিক কোনো শিল্প-কারখানা এখনও গড়ে ওঠেনি। রাঙামাটি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সহকারী ব্যবস্থাপক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে বাঁশকে সঠিকভাবে কাজে লাগালে স্থানীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে এবং নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠতে পারে।
বাঁশ ও বাঁশজাত পণ্য বর্তমানে হস্তশিল্প, নির্মাণ সামগ্রী ও আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব উপাদান হিসেবে চীন ও থাইল্যান্ডসহ আন্তর্জাতিক বাজারে বাঁশের চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।