- ২১ অক্টোবর, ২০২৫
PNN নিউজ ডেস্ক | রাজশাহী:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচন আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন নিয়ে ছাত্র-শিক্ষক সমাজে উত্তেজনা ও আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ভোটযুদ্ধে ৪৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯১৮ জন প্রার্থী, এবং এবারের নির্বাচনে ১১টি প্যানেল অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’, এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক প্যানেল রয়েছে।
নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী কমিশন ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ২৮,৯০১ ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬১ শতাংশ এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ৩৯ শতাংশ। নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি কেন্দ্রীয় সংসদে ২৩টি, হল সংসদে ১৫টি, এবং সিনেট নির্বাচনে পাঁচটি পদে ভোট দিতে হবে। প্রতিটি ভোট দিতে ভোটারদের ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে, অর্থাৎ প্রতিটি ভোট দিতে গড়ে ১৪ সেকেন্ড সময় পাবেন তারা।
ডাকসু এবং জাকসু নির্বাচনের সময় অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানোর বিতর্ক তৈরি হওয়ায়, রাকসু নির্বাচন কমিশন এবার অতিরিক্ত ব্যালট না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল আকন্দ জানিয়েছেন, ভোটের জন্য ২৮,৯০১টি ব্যালট পেপারই ছাপানো হয়েছে এবং এর বেশি কোনো ব্যালট ছাপানো হয়নি। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে যে ব্যালট পেপার ব্যবহার করা হচ্ছে তা বিশ্বস্ত উৎস থেকে প্রিন্ট করা হয়েছে।
রাকসু নির্বাচনের ফল ১৭ ঘণ্টার মধ্যে ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোট গণনা অত্যাধুনিক ওএমআর মেশিনের মাধ্যমে হবে এবং ১৭ ঘণ্টার মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, "আমরা ভোট গণনার জন্য সর্বোচ্চ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, যাতে ফল দ্রুত এবং সঠিকভাবে ঘোষণা করা যায়।"
এবারের নির্বাচনে ছাত্ররা বলেন, তারা প্যানেল বা দলের চেয়ে প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, সততা এবং কাজের মানসিকতা দেখে ভোট দেবেন। ছাত্রদলের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ত্বাসিন সিদ্দিকা রুপা বলেন, “আমি ভোট দেব, যারা অতীতে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন এবং যারা সত্যিই সক্রিয় ছিলেন, তাদের বিবেচনা করেই।"
রাকসু নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ভিপি এবং জিএস পদ নিয়ে। শিক্ষার্থীরা ধারণা করছেন, ভিপি পদে ছাত্রশিবিরের প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বড় ব্যবধানে জয়ী হতে পারেন। অন্যদিকে, জিএস পদে ছাত্রদলের সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজার সঙ্গে শিবিরের সালাউদ্দীন আম্মারের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
রাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রশাসনকে চারটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট কেন্দ্রে আনা এবং পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক ড. আবদুর রাজ্জাক সরকার জানিয়েছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাসে আসার জন্য ২৫টি বাস পরিচালনা করা হবে।
নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যে প্রস্তুত রয়েছে। তবে, গতকাল ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানের আচরণবিধি লঙ্ঘনের খবর পাওয়া গেছে, যা নিয়ে তদন্ত চলছে।
এভাবে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু নির্বাচন এ বছর একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করছে, যা ছাত্রদের জন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন আনতে পারে বলে অনেকে আশা করছেন।