- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্ট: PNN
দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলমান গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি এখন তীব্র সংকটে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় উৎপাদনের ধারাবাহিক কমতির কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দৈনিক গ্যাসের চাহিদার মাত্র ৬০ শতাংশের মতোই সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে শিল্প, আবাসিক, সার ও পরিবহণসহ বিভিন্ন খাতে ভোগান্তি বেড়ে গেছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পেট্রোবাংলা এবং সংশ্লিষ্ট খাতের সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪২০ কোটি ঘনফুট। তবে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২৫০-২৬০ কোটি ঘনফুট। বিশেষত রাজধানী ও আশপাশের শিল্পাঞ্চলে এই সংকট প্রবল। উত্পাদন ব্যাহত হওয়ায় অনেক কারখানা অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে, আবার কিছু কারখানাই বন্ধ হয়ে গেছে।
তিতাস গ্যাস কোম্পানি ও অন্যান্য বিতরণ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে দেশের গ্যাস উৎপাদন প্রতি বছর ১৫-২০ কোটি ঘনফুট কমেছে। দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমানে দৈনিক গড়ে মাত্র ১৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। স্থানীয় উৎপাদনের পাশাপাশি এলএনজি আমদানি আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে সম্ভব হচ্ছে না।
শিল্প খাতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকার উত্তরাঞ্চল ও আশুলিয়া, সাভার, জয়দেবপুর, কাশিমপুর, নারায়ণগঞ্জসহ পাশ্ববর্তী শিল্প এলাকা তীব্র সংকটের মুখোমুখি। পোশাক কারখানায় প্রয়োজনীয় চাপের গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
আবাসিক খাতেও গ্যাস সংকট প্রকট। রান্নার চুলা নিভু নিভু জ্বলছে, অনেক বাসিন্দা বিকল্প হিসেবে এলপিজি বা ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করছেন। রাজধানীর রায়েরবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, মগবাজার ও অন্যান্য এলাকায় গ্রাহকেরা গ্যাসের ঘাটতির খবর দিয়েছেন।
জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশজ গ্যাসকূপ সংস্কার ও নতুন কূপ খননের মাধ্যমে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে নতুন কূপ থেকে উৎপাদন শুরু হতে কয়েক বছর লাগবে। এছাড়া এলএনজি টার্মিনাল দ্রুত সক্ষম হলে দুই বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় উৎপাদন ও এলএনজি আমদানির সমন্বয় করে গ্যাস সংকট কমানো সম্ভব, তবে সঠিক নীতি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করা কঠিন।