- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষক নিয়োগে জামায়াতপন্থি সাবেক সংসদ সদস্যের সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ও জামায়াত নেতা লতিফুর রহমানের সাক্ষরিত একটি সুপারিশসহ প্রবেশপত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি ঘিরে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের ফেসবুক স্টোরিতে আজমীরা আরেফিন নামে এক প্রার্থীর প্রবেশপত্রের ছবি আপলোড হলে ঘটনাটি সামনে আসে। প্রবেশপত্রে সুপারিশকারী হিসেবে ইংরেজিতে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে: “Referred by Former MP Latifur Rahman, Chapainawabganj-3.”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজমীরা আরেফিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে প্রভাষক পদের প্রার্থী। সোমবার, ৪ আগস্ট সকালে উপাচার্যের দপ্তরে তাঁর মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন। নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে শনিবার রাতে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, “কীভাবে ছবিটি আমার স্টোরিতে এসেছে, তা আমি বুঝতে পারিনি। আমার ছেলে মোবাইল ফোনে গেম খেলছিল, সম্ভবত তখনই ছবিটি ভুলক্রমে আপলোড হয়ে গেছে।”
তিনি আরও লেখেন, “প্রতিদিনই কোনো না কোনো আবেদনকারী বা তাঁর প্রতিনিধি সিভি ও প্রবেশপত্র দিয়ে যান। কেউ হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান, কেউ ফোন করেন, কেউ টেক্সট করেন। পরিচিত অনেকেই অনুরোধ করে থাকেন। আমি বিশ্বাস করি, এসব সুপারিশ কোনোভাবেই লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে না।”
অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের এই ব্যাখ্যা ঘিরেও তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। অনেকে মন্তব্য করেছেন, ‘ডজন খানেক রেফারেন্সের মধ্যে শুধু জামায়াত নেতার সুপারিশই কেন ভাইরাল হলো?’ লিখন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি মন্তব্য করেন, “এটা ভুল নয়, পরিকল্পিত! সামনে রাকসু নির্বাচন। এই ইস্যুতে জল ঘোলা হবে, অস্থিরতা বাড়বে।”
বেশ কয়েকজন মন্তব্যকারী শিশুদের হাতে প্রাপ্তবয়স্কদের ফোন না দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, “একজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসকের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এত অনিরাপদ হলে, প্রশাসনিক তথ্যের নিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত?”
বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনের বাইরেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। কারণ, সদ্যসমাপ্ত রাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা বর্জন করায় অনেক পদে জামায়াত-ঘনিষ্ঠরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তারই প্রেক্ষাপটে জামায়াত নেতার সুপারিশ ফাঁস নতুন করে বিতর্ক তৈরি করলো।
সাবেক এমপি লতিফুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাংবাদিকদের ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি, তবে শিক্ষাঙ্গনে নৈতিক স্বচ্ছতা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।