- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার পুত্র আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে আজীবনের জন্য পুঁজিবাজার থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বিএসইসি।
বুধবার (৩০ জুলাই) কমিশনের ৯৬৫তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমে জানানো হয়। সভায় বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএসইসি জানায়, ২০২৩ সালের ৪ জুন অনুষ্ঠিত ৮৭১তম কমিশন সভায় “আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড” নামে ১৫০০ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদিত হয়েছিল। যার মধ্যে ১০০০ কোটি টাকা ছিল ইস্যু মূল্য। ওই বছরের ১২ জুলাই বন্ডের সম্মতি পত্রও ইস্যু করা হয়।
বন্ডটির ইস্যুয়ার ছিল শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড (এসটিএল)—একটি নতুন গঠিত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, যার অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩৩৫ কোটি টাকা। এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাত্র এক মাসের মধ্যে অর্থ উত্তোলনের জন্য আবেদন করে এবং চার দিনের ব্যবধানে ২৪৮ কোটি টাকার নগদ অর্থ ভূমি ক্রয়/উন্নয়নের নামে উত্তোলন করা হয়, যা কমিশনের দৃষ্টিতে সন্দেহজনক।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি বন্ডটির ইস্যুয়ার না হয়েও গ্যারান্টর হিসেবে থাকায় এবং বিভিন্ন প্রচারণায় “আইএফআইসি আমার বন্ড” শিরোনামে প্রচার চালানোয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করা হয়। এতে বিনিয়োগকারীরা মনে করে বসেন, বন্ডটি সরাসরি আইএফআইসি ব্যাংক কর্তৃক ইস্যু করা।
বিএসইসি তদন্ত কমিটি বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান পরিচালনা করে। কমিশনে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিচের শাস্তিমূলক সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়:
এই ঘটনার সূত্রপাত ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের স্মৃতিও আবার উসকে দিয়েছে। সেই সময়ও একটি সরকারি তদন্ত কমিটি সালমান এফ রহমানসহ ৬০ জন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছিল যারা শেয়ারবাজারে কারসাজির মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করেছিলেন। সেই সময় সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল—ভবিষ্যতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কঠোর নজরদারিতে রাখা জরুরি।
উল্লেখ্য, সালমান এফ রহমান ছিলেন শেখ হাসিনার ক্ষমতাকালীন সময়ের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ দেশের পুঁজিবাজারকে স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ করার পথে একটি বড় বার্তা দেবে।