- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
কুমিল্লার মুরাদনগরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের’ প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচ সাংবাদিকসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত উপজেলার আল্লাহ চত্বর এলাকায় টান টান উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার সূচনা হয় গতকাল মঙ্গলবার। বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারীরা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ 'মুরাদনগরের সর্বস্তরের জনগণ' ব্যানারে আসিফের পক্ষে পাল্টা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
বিকেল পাঁচটার দিকে ডি আর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে আসিফের অনুসারীদের মিছিল শুরু হয়ে আল্লাহ চত্বরের দক্ষিণ পাশে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। একই সময়ে চত্বরের উত্তর পাশে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় কায়কোবাদের সমর্থকেরা। এ সময় উভয় পক্ষ একে অন্যের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে জেলা পরিষদ মার্কেট এলাকা থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হলে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ।
এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরাও হামলার শিকার হন। স্টার নিউজের জেলা প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মারুফ, খোলা কাগজের শাহ ইমরান, এস এ টিভির ক্যামেরাপারসন এ এস বাপ্পীসহ পাঁচ সাংবাদিক আহত হন। সাংবাদিক মারুফ জানান, তাঁকে লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয় এবং ক্যামেরা বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়।
আসিফ মাহমুদের অনুসারীরা দাবি করেন, কায়কোবাদের অনুসারীরা পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছেন। উপজেলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মিনাজুল হক বলেন, “কয়েক দিন আগে কায়কোবাদের এক অনুসারী চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই হামলা। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে শত শত ইটপাটকেল ছোড়া হয়।”
অন্যদিকে, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, “আমাদের ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি চলাকালে আসিফ মাহমুদের সমর্থকেরা আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। আমাদের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাঁরা আমাদের নেতা কায়কোবাদকে নিয়েও অশালীন স্লোগান দেন।”
হামলায় গুরুতর আহত একজন ইউপি সদস্য শেখর বলেন, “আমরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই মাথায় ইট পড়ে রক্তাক্ত হই। আমাকে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়।”
মুরাদনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিন কাদের খান বলেন, “বিকেলে এনসিপির সমাবেশ চলাকালে হঠাৎ ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার তদন্ত চলছে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সন্ধ্যার পর সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এলাকায়। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে। ঘটনার ভিডিও ও ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এই ঘটনায় এলাকায় বিরাজ করছে চরম রাজনৈতিক উত্তেজনা ও উদ্বেগ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।