Tuesday, October 14, 2025

পাঁচটি দুর্বল শরিয়াহ ব্যাংকের একীভূতকরণ স্থগিত, রাজি নয় দুই ব্যাংক


প্রতীকী ছবিঃ পাঁচটি দুর্বল শরিয়াহ ব্যাংক (সংগৃহীত)

স্টাফ রিপোর্টার | PNN:

দুর্বল অবস্থায় থাকা পাঁচটি শরিয়াহ ব্যাংকের একীভূতকরণ কার্যক্রম আপাতত স্থগিত হয়েছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক একীভূতে রাজি হলেও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও এক্সিম ব্যাংক এতে সম্মতি দেয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকের পরও দুই ব্যাংক নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং সিদ্ধান্তের আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক চিত্রের ভিত্তিতে একীভূতের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে এসআইবিএল ও এক্সিম ব্যাংক নিজেদের অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে, ফলে একীভূত বিলম্বিত হয়েছে।

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেও দুই ব্যাংক একীভূতের বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছে। এসআইবিএলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ড. মো. রেজাউল হক বলেন, “আমরা আমাদের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য সময় চাই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাপ দিলেও গায়ের জোরে একীভূত হতে পারি না। আদালতের মাধ্যমে আমাদের অবস্থান রক্ষা করা হয়েছে।” এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, “বর্তমানে ব্যাংক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। একীভূত না করে ঘুরে দাঁড়াতে সময় চেয়েছি। গভর্নর আমাদের সমর্থনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে পাঁচ ব্যাংকের মোট আমানত ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা, ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকভিত্তিক বিশ্লেষণে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটির ৯৬ শতাংশ, গ্লোবালের ৯৫ শতাংশ, এসআইবিএলের ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ শতাংশ।

দুটি ব্যাংকের অবস্থানের কারণে পুরো একীভূত প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে শুধু অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নয়, নির্বাচনের আগে বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম ফরিদ উদ্দীন বলেন, “আমানতকারীরা টাকার জন্য আসছেন; কিন্তু তুলতে পারছেন না। যত দ্রুত সিদ্ধান্ত হবে, তত ভালো।” ফার্স্ট সিকিউরিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত নেই।” গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন জানান, বৈঠকে তারা একীভূতে সম্মতি দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি, তারল্য সংকট, খেলাপি ঋণ, সিআরআর ও প্রভিশন শর্টফল নিয়ে শুনানি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আশা, একীভূত কার্যক্রম হলে ব্যাংকগুলো পুনরুদ্ধার হতে পারে। তবে দুই ব্যাংক রাজি না হওয়ায় প্রক্রিয়া থেমে গেছে। মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “যদি ব্যাংকগুলো নিজেই ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তবে ভালো। কিন্তু এখন আমানতকারীরা টাকা তুলতে পারছে না। একীভূত প্রক্রিয়া থেমে যেতে পারে কি না, এখনই বলা যাচ্ছে না।”

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন