- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধেও কঠোর মুদ্রানীতির ধারা বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১ আগস্ট বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। মুদ্রানীতির বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করেন নির্বাহী পরিচালক এজাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, নীতিসুদহার (রেপো রেট) আগের মতো ১০ শতাংশেই বহাল থাকবে। যদিও জুন ২০২৫-এ মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮ শতাংশে নেমেছে, কিন্তু সেটি এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা ৩–৫ শতাংশের নিচে আসেনি। ব্যাংক সুস্পষ্ট করেছে—মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত রেপো রেট পরিবর্তন হবে না।
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা এবার আরো কমিয়ে ধরা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে তা ৭.২ শতাংশ এবং জুনে ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯.৮ শতাংশ, বাস্তবে অর্জিত হয়েছিল মাত্র ৬.৪ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, অর্থনীতিতে এখনো রয়েছে কিছু গভীর চ্যালেঞ্জ—যেমন মূল্যস্ফীতির চাপ, আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগের স্থবিরতা এবং উচ্চ খেলাপি ঋণ। যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্ক ব্যবস্থার কারণে টাকার মান হ্রাস এবং রপ্তানিতে চাপ পড়তে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
দুর্বল ব্যাংকগুলোর মার্জারের বিষয়ে গভর্নর আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদ থাকবে”। তিনি জানান, এখন বড় পরিসরে সার্জারি হবে, এবং সরকার এতে তহবিল জোগাবে—যা পরে সুদসহ ফেরত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “গত সরকারে ঋণ প্রদানে ছিল স্বেচ্ছাচারিতা। এখন সেই অবস্থান পাল্টেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পরিবারতন্ত্র ও পরিচালকদের নিয়ন্ত্রণ সীমিত করা হবে।”
গার্মেন্ট খাতে বিনিয়োগ স্থবির থাকলেও রপ্তানি কমবে না বলে আশ্বস্ত করেন গভর্নর। “আমদানিতে কোনো বাধা নেই। কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর এখনো পূর্ণ সক্ষমতায় পৌঁছায়নি,” বলেন তিনি।
গভর্নর বলেন, এআই প্রযুক্তির আগ্রাসনে আগামীতে চাকরি বাজার আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে। কিন্তু বাংলাদেশে মানসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি না হওয়ায় উদ্বেগ রয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, ডলার কেনার মাধ্যমে বাজারে ৬ হাজার কোটি টাকা প্রবাহিত হয়েছে। এর প্রভাবে শেয়ারবাজারেও ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। ব্যালেন্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত থাকায় অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এসেছে বলেও জানান গভর্নর।