- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত প্রক্টর ড. সোনিয়া খান সনিকে শিক্ষার্থীরা ‘মৃত’ ঘোষণা করলেও তিনি এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন। গত দুই মাস ধরে কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকলেও তার অপসারণ না হওয়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৩০ এপ্রিল উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবিতে প্রতীকী কফিন মিছিল ও গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে এবং সেদিনই ড. সোনিয়াকে প্রতীকীভাবে ‘মৃত’ ঘোষণা করে। এই কর্মসূচির পেছনে মূলত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা ও জিডির প্রতিবাদই ছিল মূল কারণ।
এরপর ১৩ মে বরখাস্ত করা হয় তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য ড. তৌফিক আলম। উপাচার্য পরিবর্তনের পর প্রশাসনিক নানা পরিবর্তন হলেও বিতর্কিত প্রক্টর সোনিয়াকে সরানো হয়নি, যা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ বলেন, নতুন উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তারা বারবার দাবি করে আসছেন, যারা ফ্যাসিবাদী প্রশাসনের দোসর ছিলেন এবং জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন, তাদের সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ড. সোনিয়া খান সনি। তিনি অভিযোগ করেন, উপাচার্য তাদের কথায় গুরুত্ব দিচ্ছেন না, শুধু সময়ক্ষেপণ করছেন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেননি, যা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় তার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। মোকাব্বেল আরও বলেন, তিনি আশাবাদী, উপাচার্য শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দেবেন।
সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মোস্তাকিম মিয়া জানান, সাবেক উপাচার্য শুচিতা শরমিনের স্বৈরাচারী ও অনিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা যখন যৌক্তিক আন্দোলনে নেমেছিলেন, তখন প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা অনেকে নির্লিপ্ত ছিলেন, যার মধ্যে প্রক্টরের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত। তিনি বলেন, বারবার ফোন করার পরও শিক্ষার্থীরা কিংবা সাংবাদিকরা প্রক্টরকে পাননি। অথচ অনেক শিক্ষক অনিয়মের প্রতিবাদে পদত্যাগ করলেও তিনি থেকে গেছেন এবং বরং অনিয়মের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নতুন উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আশার আলো দেখলেও, একজন প্রশ্নবিদ্ধ ও দায়িত্বহীন প্রক্টরের বহাল থাকা সত্যিই হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেন মোস্তাকিম। তার মতে, এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন ন্যায়পরায়ণ, দায়িত্বশীল ও শিক্ষার্থীবান্ধব ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া দরকার।
অপরদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম বলেন, তিনি নতুন দায়িত্বে আসায় অনেককেই এখনো ভালোভাবে চেনেন না, যার ফলে প্রক্টর বাছাই করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “আপনারা যদি আমার জায়গায় থাকতেন, তাহলে বুঝতে পারতেন পরিস্থিতি কেমন।” তবে তিনি আশ্বাস দেন, শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে শিগগিরই একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
তথসুত্রঃ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস