- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্ট: PNN
দেশের অর্থনীতির গতিশীলতা শ্লথ হয়ে পড়ছে এবং ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)-এর সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ গতকাল বৃহস্পতিবার পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এ আয়োজিত মাসিক অর্থনৈতিক পর্যালোচনা সভায় বলেন, “দেশের অর্থনীতির রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সরকার ব্যবসায়ীদের কথায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ব্যাংক ঋণের প্রবাহ কমে গেছে, যা উৎপাদন ও বিনিয়োগকে প্রভাবিত করছে।”
আনোয়ার উল আলম আরও জানান, বর্তমানে ব্যাংক ঋণ নেওয়া ব্যবসায়ীরা প্রধানত পুরনো ঋণ পরিশোধের জন্যই ঋণ নিচ্ছেন, যাতে তা খেলাপি না হয়। তিনি বলেন, “বর্তমানে খেলাপি ঋণ ৩৫ শতাংশের বেশি, যা আইএমএফের মধ্যম মানের ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়েরও অনেক উপরে। ঋণ পুনঃতপশিলের সময়কাল কমানো ঋণ খেলাপির সংখ্যা আরও বাড়াবে।”
তিনি সরকারের জ্বালানি নীতি নিয়েও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। ২০২২ সালের পর থেকেই জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং ছোট ও মাঝারি ব্যবসার প্রায় ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। রাজধানীর জনসংখ্যা বেড়ে প্রায় ৩ কোটি ছাড়িয়েছে, যা শহরের ভোগ্যপণ্য ও পরিবহন ব্যবস্থায় চাপ তৈরি করেছে।
পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার বলেন, “রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট (আরইইআর) বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রপ্তানিকারকদের জন্য উদ্বেগের কারণ। সরকারের উচিত নমনীয় আমদানি নীতি গ্রহণ করে রপ্তানিকে সহায়তা করা।” তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির গতি কমলেও স্থিতিশীলতা এসেছে, তবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য উদার নীতি প্রয়োজন।
প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান সতর্ক করেছেন, খেলাপি ঋণ না নিয়ন্ত্রণ করলে দেশের মধ্যমেয়াদি অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি হবে। “প্রায় ৬.৪ লাখ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণ দেশের ব্যাংকিং খাত ও উৎপাদনশীল খাতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এর ফলে উচ্চ সুদহার, কম বিনিয়োগ ও দুর্বল প্রবৃদ্ধির ‘বিষাক্ত চক্র’ তৈরি হচ্ছে।”
প্যানেল আলোচকরা করনীতি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতির বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, “করনীতি প্রণয়নে রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ভূমিকা থাকা উচিত, যা নীতির বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।” ড. ওয়াসেল বিন সাদাত যোগ করেন, “অর্থনীতির ৮৫ শতাংশ এখনও অনানুষ্ঠানিক খাতে রয়েছে, যা করনীতির কার্যকারিতাকে সীমিত করছে।”
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, খেলাপি ঋণ সংকট মোকাবিলা না করলে বাংলাদেশ উচ্চ সুদহার, মূল্যস্ফীতি ও নিম্ন প্রবৃদ্ধির চক্রে আটকে যেতে পারে, যা শুধুমাত্র ব্যাংক খাতের সমস্যা নয়, এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ।