- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি জাপানের সঙ্গে একটি "বিশাল" বাণিজ্য চুক্তি করেছেন, যার আওতায় জাপানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
মঙ্গলবার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, এই চুক্তির আওতায় জাপান যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং এর ৯০ শতাংশ মুনাফা পাবে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে গাড়ি, ট্রাক, চাল ও কৃষিপণ্যসহ বেশ কয়েকটি পণ্যে জাপান তাদের বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, “এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ সময়। বিশেষ করে জাপানের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তিনি ২৪ শতাংশ শুল্ক এবং চলতি মাসের শুরুতে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের কথা বলেছিলেন। সেই তুলনায় এবার প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ অপেক্ষাকৃত কম।
হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প আরও বলেন,
“জাপানের শীর্ষ কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। আমরা দীর্ঘ আলোচনা করেছি। এটি সকল পক্ষের জন্য লাভজনক একটি চুক্তি।”
তবে এখন পর্যন্ত জাপান সরকার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। সিবিএস নিউজ জানায়, তারা ওয়াশিংটনে জাপানি দূতাবাসে যোগাযোগ করেছে, তবে সেখানে থেকেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জাপান দেশটির পঞ্চম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৪ সালে জাপান যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭৯.৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কিনেছে, বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করেছে ১৪৮.২ বিলিয়ন ডলারের জাপানি পণ্য। এর মধ্যে প্রায় ৫২.৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ছিল গাড়ি ও যন্ত্রাংশ।
তবে ঠিক কোন কোন পণ্যের ওপর এই ১৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এর আগে ট্রাম্প বিদেশি গাড়ি ও যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার রাতেও (স্থানীয় সময়) ট্রাম্প আরেকটি ঘোষণা দেন— আলাস্কার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) রপ্তানি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি আলাদা চুক্তির দিকে এগোচ্ছে।
এর আগে একই দিন তিনি ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের সঙ্গে ১৯ শতাংশ শুল্কের বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দেন। এছাড়াও তিনি জানান, মেক্সিকো, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনাও চলছে।
চলতি জুলাই মাসে, ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় দুই ডজন দেশের কাছে একটি চিঠি পাঠায়, যেখানে বলা হয়— আগামী ১ আগস্ট থেকে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হবে, যদি তারা “অন্যায্য বাণিজ্যচর্চা” বন্ধে চুক্তিতে না আসে। এপ্রিল মাসে ঘোষিত ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন,
“এই চিঠিগুলোর মাধ্যমে দেশগুলো আবার আলোচনার টেবিলে এসেছে। এখন তারা হয় নিজেদের বাজার খুলে দেবে, নয়তো শুল্কের মুখে পড়বে।”
তিনি আরও জানান, ছোট দেশগুলো গড়ে ১০ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়বে, এবং বড় দেশগুলোর ক্ষেত্রে হার আরও বেশি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালে গড় শুল্ক হার ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ। ট্রাম্পের মতে, এই শুল্কনীতি দেশটির উৎপাদন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করবে, অন্যায্য বাণিজ্য রোধ করবে এবং সরকারের রাজস্ব বাড়াবে।
তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে।
ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল আগেই বলেছিলেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে ভোক্তামূল্য বাড়তে পারে, তাই সুদের হার এখনো তুলনামূলকভাবে বেশি রাখা হয়েছে।
তবে লুটনিকের দাবি,
“আমার বিশ্বাস, মূল্যস্ফীতি যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকবে। বরং শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”