Tuesday, October 14, 2025

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ সত্ত্বেও কার্যক্রম অব্যাহত, প্রশাসনের নীরবতা শিক্ষার্থীদের উদ্বেগের কারণ


ছবিঃ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (সংরিহত)

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) একবছর আগে কাগজে-কলমে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। ছাত্রসংগঠনগুলো প্রশাসনের নজর এড়িয়ে অবাধে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছে।

গত বছরের ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫তম সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠন ও সকল পেশাজীবী সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে এক বছরও না পেরোতেই শিক্ষার্থীরা জানাচ্ছেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ সত্ত্বেও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পরিচালনা করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পেশাজীবী সংগঠনও প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে। সম্প্রতি গঠিত “জাতীয়তাবাদী কর্মচারী পরিষদ” আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্বে আছেন ড্রাইভার মামুন শেখ ও সদস্য সচিব সিকিউরিটি গার্ড জাকির মৃধা।

শিক্ষার্থীরা জানাচ্ছেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ২৯ জুলাই কীর্তনখোলা অডিটোরিয়ামে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কর্মী সম্মেলন করেছে। এছাড়া নবীন শিক্ষার্থীদের লিফলেট বিতরণ, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা, বিজয় দিবস র‍্যালি, বিভিন্ন বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়েছে। ইসলামী ছাত্র শিবিরও সাইকেল র‍্যালি, বৃক্ষরোপণ, মিলাদ মাহফিল ও ইদুল আজহায় শিক্ষার্থীদের ভোজসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

গত ২২ জুলাই গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল তাদের ব্যানারে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে গণভোটের আয়োজন করে। এনসিপির ছাত্রসংগঠন বাগছাস যদিও কোনো কমিটি গঠন করেনি, পদপ্রত্যাশীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যানার ও অন্যান্য কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। যারা কার্যক্রম চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে ক্ষমতাশালী মনে করছেন। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরিফুর রহমান অনিক বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে না। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র, রাজনীতি পরিবেশ নষ্ট করে।”

শেরে বাংলা হলের শিক্ষার্থী আসিফ বিল্লাহ প্রশাসনের নীরবতার সমালোচনা করে বলেন, “নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানো এবং প্রশাসনের নীরবতা শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে।”

বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা মন্তব্য করেছেন, সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসে থাকা উচিত এবং প্রশাসন আলোচনা করে তা ফিরিয়ে আনা উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. মুহসিন উদ্দীন বলেন, “নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে প্রশাসন বিধিমতো ব্যবস্থা নেবে।” তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নে রাজনীতি চললেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এই পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের অপেক্ষা করছে, যাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিকারের শিক্ষাক্ষেত্রে রূপান্তরিত হতে পারে।


Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন