- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার | PNN:
বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরুদ্ধার এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে অভূতপূর্ব বৃদ্ধির ধারা দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও আস্থার পুনর্জাগরণের সংকেত দিচ্ছে। এই প্রবাহ দেশের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি কার্যকর প্রমাণ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বুধবার (২৯ অক্টোবর) প্রকাশিত তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর বিএমপিএম৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭.৩৫ বিলিয়ন ডলার। এই পরিমাণ প্রায় ৫ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান। যদিও আদর্শ রিজার্ভ ছয় মাসের আমদানি ব্যয় কভার করা, বর্তমান পরিসংখ্যান সামগ্রিকভাবে স্বস্তিদায়ক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহে অভূতপূর্ব বৃদ্ধিই মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে রেকর্ড স্থাপন করেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৭.৫৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬.২৩ শতাংশ বেশি।
আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপপরিচালক থমাস হেলব্লিং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধিকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, “দেশের লেনদেন ভারসাম্যের চাপ বজায় থাকায় রিজার্ভ সঞ্চয় আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির একটি কেন্দ্রীয় লক্ষ্য।”
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, “সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার হয়েছে, যদিও তা সামান্য।” খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনও রেমিট্যান্স প্রবাহের গুরুত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
রেমিট্যান্সের আনুষ্ঠানিক পথে প্রবাহ বৃদ্ধির পেছনে সরকারের নীতি এবং বাজারের স্থিতিশীলতা উভয়ই ভূমিকা রেখেছে। প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করতে উৎসাহিত করতে সরকার ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। এছাড়া, হুন্ডি ও হাওলা চ্যানেলের ব্যবহার কমে আসায় আরও বেশি রেমিট্যান্স আনুষ্ঠানিক পথে আসছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি গ্রামীণ এলাকায় বিশেষভাবে অর্থনৈতিক স্বস্তি এনে দিয়েছে, যেখানে প্রবাসী আয়ের ওপর পরিবারগুলো নির্ভরশীল। ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে এই ধারা অব্যাহত রয়েছে এবং এটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরুদ্ধারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও আস্থার পুনর্জাগরণের প্রমাণ দিচ্ছে এবং টাকার বিনিময় হারকে আরও দৃঢ় করছে।