- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
PNN নিউজ ডেস্ক | রংপুর:
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) অন্তত ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী ভুয়া বা জাল সনদ জমা দিয়ে চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছেন। বিষয়টি সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-রেজিস্টার মাহবুবার রহমানও। এই ঘটনায় ইতোমধ্যেই একজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদোন্নতি স্থগিত রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জলিল মিয়া ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর মাহবুবার রহমানকে অস্থায়ী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। পরের বছর তিনি স্থায়ী হন। ২০১৮ সালের ২৪ জুন সহকারী রেজিস্ট্রার পদে উন্নীত হন এবং ২০২৩ সালের ২ এপ্রিল উপ-রেজিস্টার হিসেবে পদোন্নতি পান।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ যাচাই করে দেখেছে, মাহবুবার রহমানের জমা দেওয়া ২০০৯ সালের দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স সনদ ভুয়া। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাহবুবারের নামে তাদের কোনো সনদ ইস্যু হয়নি।
মাহবুবারের পাশাপাশি আরও ১৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সনদ ভুয়া বলে অভিযোগ উঠেছে। ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ১১৬তম সিন্ডিকেট সভায় পদোন্নতির জন্য চারজন কর্মকর্তার নাম ওঠে, কিন্তু তাদের সনদ যাচাই না হওয়ায় পদোন্নতি স্থগিত রাখা হয়। তারা হলেন—স্টোরকিপার রেহমান রহমান, কম্পিউটার অপারেটর মো. এমদাদুল হক, ক্যাটালগার মো. মাহফুজার রহমান এবং সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামান।
এছাড়া আরও কয়েকজনের সনদ ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। সেকশন অফিসার শাহিদ আল মামুন ও আতিকুজ্জামান দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাসের যে সনদ জমা দিয়েছেন, তা ভুয়া। শারীরিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক সোহেল রানা রয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ পাসের ভুয়া সনদ জমা দিয়ে ২০১৯ সালে স্থায়ী নিয়োগ পান। ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর ইরিনা নাহার এশিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ভুয়া মাস্টার্স সনদ জমা দিয়ে চাকরিতে যোগ দেন এবং ১৬ সেপ্টেম্বর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
লাইব্রেরি সহকারী আলমগীর হোসেনও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জাল সনদ জমা দিয়েছেন। ক্যাটালগার লুৎফা বেগম ও রাফিয়া আক্তারের ডিপ্লোমা সনদ যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সংস্থাপন শাখার দায়িত্ব ছিল সনদ যাচাই করা, কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে বিষয়টি দীর্ঘদিন উপেক্ষিত ছিল।
উপ-রেজিস্টার মাহবুবার রহমান বলেন, “প্রথমে আমার সনদের প্রয়োজন ছিল না, পরে পদোন্নতির সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হয়েছিল। আমার সনদ সঠিক নয়, এটা আমি স্বীকার করছি।”
উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী বলেন, “আমি বিস্মিত। একজনকে ইতোমধ্যেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও কয়েকজনের সনদ যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। যাঁদের সনদ ভুয়া প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”