- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নতুন ঘোষিত আমদানি শুল্ক কাঠামো দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য ভারসাম্যে এক বড় পরিবর্তন এনেছে। এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে বাংলাদেশ, যেখানে ভারতের শীর্ষস্থানীয় টেক্সটাইল কোম্পানিগুলো ব্যাপক শেয়ার পতনের মুখে পড়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশি তৈরি পোশাক ও অন্যান্য রপ্তানি পণ্যে আমদানি শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের জন্য শুল্ক হার কমিয়ে আনা হয়েছে ২৯% থেকে ১৯%। এছাড়া ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার জন্যও আমদানি শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোর একটি। ফলে ২০ শতাংশ শুল্ক হার বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতামূল্যতা অনেকগুণ বাড়িয়ে তুলবে।
BGMEA (বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন)-এর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন,
“এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে আমাদের বাজারে প্রবেশাধিকার সহজ হবে এবং অর্ডার বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হবে।”
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেখানে তৈরি পোশাক খাত প্রায় ৮৪% রপ্তানি আয়ের জোগানদাতা, সেখানে এই সুবিধা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
শুল্ক হ্রাসের এই ঘোষণার পরপরই ভারতের বস্ত্র খাত-নির্ভর কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ব্যাপক দরপতন হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক নিম্নমুখী হতে থাকে।
Pearl Global Industries: পতন ৭.২%, নতুন দর ₹১,৩৮০.০৫
KPR Mill: পতন ৪.৩%, বর্তমান দর ₹১,০৯২
Gokaldas Exports: পতন ৩.১%, দর ₹৮২৪.৫০
Welspun Living: কমে ১.৯%, দর ₹১২৩.৮০
Arvind Ltd: কমে ১.৮%, দর ₹৩১০.৪০
বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, মার্কিন বাজারে ভারতের তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে যেতে পারে কারণ ক্রেতারা এখন কম শুল্কে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম থেকে পণ্য আমদানি করতে পারবে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের ‘ডিফারেনশিয়াল ট্রেড পলিসি’ ভারতের মতো শ্রমনির্ভর অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।
গৌরব গর্গ, সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট, বলেন—
“আমরা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। যদি ভারত সরকার দ্রুত বাণিজ্য চুক্তি নবায়নের পথে না এগোয়, তাহলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ আমাদের বাজার দখল করে নিতে পারে।”
ভারতের বস্ত্র রপ্তানিকারক সংস্থাগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন তারা দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। AEPC (Apparel Export Promotion Council)-এর মতে,
“আমাদের প্রতিযোগীরা যখন কম শুল্কে পণ্য পাঠাতে পারছে, তখন ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য মার্কিন বাজারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”
বিশেষত যেখানে রপ্তানি বাজারে মুদ্রা দরপতন ও বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, সেখানে শুল্ক বৈষম্য ভারতের অবস্থান আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কাঠামোতে ৫০টিরও বেশি দেশের ওপর শুল্ক হ্রাস কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার কিছু দেশও অন্তর্ভুক্ত। এই নীতিকে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের “স্ট্র্যাটেজিক বাণিজ্য কূটনীতি” বলছেন, যেখানে চীনের প্রভাব কমিয়ে আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করাই উদ্দেশ্য।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এটা এক ‘Opportunity vs. Vulnerability’ পরিস্থিতি। একদিকে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো নতুন বাজার সুযোগ পাচ্ছে, অন্যদিকে ভারত তার প্রথাগত বাজার হারানোর মুখে।
তথ্যসূত্রঃ ইকনমিক টাইমস