- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
PNN নিউজ ডেস্ক। যশোর
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে বৃহৎ সংঘর্ষ ঘটেছে। সংঘর্ষে অন্তত ২৭ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
ঘটনা ঘটে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন আমবটতলা বাজার এলাকায়। সংঘর্ষের পর ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চৌগাছা–ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকেও অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার (২৪ নভেম্বর) ওই নারী শিক্ষার্থী আমবটতলা বাজারের একটি দোকানে গেলে দোকানদার তাকে উত্ত্যক্ত করেন। বিষয়টি শিক্ষার্থী সহপাঠীদের জানালে তারা মঙ্গলবার দোকানদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যান। এক পর্যায়ে দোকানদারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা ও মারধর হয়। এরপর স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। স্থানীয়রা মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকার মানুষকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ডাকেন।
সংঘর্ষ চলাকালে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ক্যাম্পাস এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এক সাংবাদিকের সাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়, আর কয়েকজন সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। সংঘর্ষ শুরু হওয়ার তিন ঘণ্টা পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী না আসায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পায়। পরে উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টোরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
রাত ৯টার পর সেনা ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার পরিদর্শন করেন উপাচার্য, ট্রেজারারসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, উত্ত্যক্তের বিষয়টি জানতে পেরে দোকানদারের কাছে প্রশ্ন করতে গেলে স্থানীয়দের বড় একটি দল তাদের ওপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পিছন থেকে ইট নিক্ষেপ করা হয়।
শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হোসাইন আল মামুনের পদত্যাগ দাবি করেন এবং তাদের অবরুদ্ধ রাখেন।
এ বিষয়ে প্রক্টর ড. মো. ওমর ফারুক জানান, "একজন শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনাই এই সংঘর্ষের মূল কারণ। আমরা প্রক্টরিয়াল বডিসহ অনেক শিক্ষক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেরি করায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সংঘর্ষে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।"
টানা চার ঘণ্টা উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অবরুদ্ধ থাকার পর শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা সমঝোতা করেন। সমঝোতার অংশ হিসেবে বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকাল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ স্থান ত্যাগ করলে রাত ১টার পর উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিজ নিজ বাস ভবনে ফিরে যান।