- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আসিফ মাহমুদ, স্টাফ রিপোর্টার
মাত্র দুদিন আগে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পের আতঙ্ক এখনও কাটেনি দেশবাসীর মনে। শুক্রবারের সেই ভূমিকম্পের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিন দফা আফটারশক অনুভূত হয়েছে। ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ছোট ও মাঝারি মাত্রার কম্পন বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাসও হতে পারে। চলতি মাসেই আরও কয়েকটি কম্পন আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্প-ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা ও মানচিত্র বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর তুলনায় দেশের উত্তর-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলই রয়েছে সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মানচিত্র অনুযায়ী, ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে দেশকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে—জোন-১ (উচ্চঝুঁকি), জোন-২ (মাঝারি ঝুঁকি) এবং জোন-৩ (নিম্ন ঝুঁকি)।
উচ্চঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল (জোন-১)
উচ্চঝুঁকির তালিকায় রয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু অংশ—রাঙামাটি, বান্দরবান। এসব অঞ্চলের নিকট দিয়ে ডাউকি, মধুপুর ও মিয়ানমার ফল্ট লাইনের সক্রিয় প্লেট বাউন্ডারি অতিক্রম করায় বড় ধরনের কম্পন সৃষ্টির আশঙ্কা বেশি।
মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল (জোন-২)
জোন-২ এ রয়েছে ঢাকা, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, বগুড়া এবং রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ এলাকা। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে রাজধানী ও আশপাশের অঞ্চলে কম্পন তীব্রভাবে অনুভূত হওয়ায় এ অঞ্চলের ঝুঁকির মাত্রা আবারও নতুন করে সামনে এসেছে।
নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চল (জোন-৩)
ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত। এই জোনে থাকা জেলাগুলো সরাসরি কোনো সক্রিয় প্লেট বাউন্ডারির ওপর অবস্থিত নয়।
নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ জেলার তালিকা:
• খুলনা বিভাগ: খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর
• বরিশাল বিভাগ: বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি
• রাজশাহী বিভাগের পশ্চিমাংশ: তুলনামূলক নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত
বিশেষজ্ঞরা জানান, এসব জেলাগুলো মূল টেকটোনিক প্লেট বাউন্ডারি—যেমন ডাউকি ফল্ট, মধুপুর ফল্ট বা মিয়ানমার ফল্ট লাইন—থেকে দূরে অবস্থিত। ফলে বড় ধরনের কম্পনের সরাসরি উৎস হিসেবে বিবেচিত হয় না।
দেশের পাঁচ প্রধান ভূমিকম্প উৎপত্তিস্থল
বাংলাদেশের চারপাশে পাঁচটি প্রধান সিসমিক উৎপত্তি অঞ্চল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্লেট বাউন্ডারি-১ (মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী), প্লেট বাউন্ডারি-২ (নোয়াখালী থেকে সিলেট), এবং প্লেট বাউন্ডারি-৩ (সিলেট থেকে ভারতের দিক), পাশাপাশি হালুয়াঘাট এলাকার ডাউকি ফল্ট ও মধুপুর ফল্ট উল্লেখযোগ্য।
নিরাপদ হলেও ঝুঁকি পুরোপুরি নেই
যদিও নিম্নঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলগুলো তুলনামূলক নিরাপদ, তবুও দুর্বল অবকাঠামো বা নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করলে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি থেকেই যায়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, রিখটার স্কেলে কম মাত্রার ভূমিকম্পেও অরক্ষিত ভবন ধসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
দেশবাসীর প্রতি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা, প্রস্তুতি এবং ভবন নির্মাণে সঠিক নিয়ম মেনে চলাই পারে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে।