- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্ট: PNN
ইতালিতে পৌঁছানোর স্বপ্ন নিয়ে লিবিয়া থেকে সাগর পথে পাড়ি জমালেও জীবনের পথ শেষ হয়েছে গোপালগঞ্জের দুই যুবকের। ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় মুকসুদপুর উপজেলার পশ্চিম লখন্ডা গ্রামের এনামুল শেখ (২৭) ও আনিস শেখ (৩৫) প্রাণ হারিয়েছেন। একই গ্রামের আরও পাঁচ যুবকের এখনো সন্ধান মেলেনি। ঘটনার খবর পৌঁছাতেই নিহতদের পরিবারসহ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে গভীর শোক।
সরেজমিনে বুধবার (১৯ নভেম্বর) পশ্চিম লখন্ডা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শোকে ভেঙে পড়েছেন নিহত দুই পরিবারের সদস্যরা। স্বজনদের দাবি, মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এনামুল ও আনিস দুজনেই স্থানীয় দালালচক্রের মাধ্যমে প্রায় ২১ লাখ টাকা করে দিয়ে গত অক্টোবরে লিবিয়া যান। পরিকল্পনা ছিল নৌকায় করে ইতালি পৌঁছানো। কিন্তু গত ১৩ নভেম্বর রাতে লিবিয়ার আল-খুমস উপকূলে দুটি নৌকা ডুবে গেলে তাদের যাত্রা রূপ নেয় মৃত্যুর পথে।
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি যুবক আবুল শেখ ধলা পরিবারকে ভিডিও কলে জানান, দুই নৌকার সংঘর্ষেই মূল দুর্ঘটনা ঘটে। “আমাদের নৌকার মাঝখানে যারা ছিল, তাদের কেউই বাঁচেনি। এনামুল ও আনিস সেখানেই বসেছিল,” বলেন তিনি। তিনি আরও জানান, অনেকে সাগরে ভেসে যান, কেউ কেউ লাইফ জ্যাকেট ধরে বেঁচে থাকেন। উদ্ধারকারীরা পর্যায়ক্রমে সবাইকে তোলার পর শেষে তাকে উদ্ধার করে।
নিখোঁজরা হলেনঃ পশ্চিম লখন্ডা গ্রামের ইব্রাহিম শেখ, হাবিবুল্লাহ মোল্লা সোহেল, আশিক মিনা, দুলাল মিনা এবং পাশের গুনহার গ্রামের নিয়াজ মিনা। তাদের পরিবারের সদস্যরা অসহায়ভাবে অপেক্ষা করছেন প্রিয়জনের খোঁজের জন্য।
স্থানীয়রা জানান, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দালালচক্র সক্রিয়। তারা বেকার যুবকদের ইতালিতে পৌঁছে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু বারবার এমন মৃত্যুকূপে ঠেলে দিচ্ছে তাদের।
ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলমগীর মোল্যা বলেন, “মানুষ কর্মসংস্থানের আশায় সব হারিয়ে বিদেশে যায়। কিন্তু অবৈধ পথে সমুদ্রযাত্রা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই অনিয়ম বন্ধ হওয়া জরুরি।”
মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, নিহত ও নিখোঁজদের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। পরিবারগুলোর পাশে প্রশাসন রয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রবাসী কল্যাণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ষষ্টীপদ রায় বলেন, “সরকার বৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তবুও অনেকেই দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধ পথে ঝুঁকি নিচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি।”