- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
ঢাকা, ২২ জুলাই ২০২৫
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কলেজ চত্বরে এক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।
আয়োজক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এই কর্মসূচি সম্পূর্ণ অহিংস, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক হবে। তারা বলছেন, “ভয় নয়, আমরা চাই ন্যায়বিচার”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে তারা ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছেন, যা তারা কর্তৃপক্ষের সামনে উপস্থাপন করবেন।
শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ছয় দফা দাবি নিম্নরূপ—
১. বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের সঠিক নাম ও পরিচয় প্রকাশ করতে হবে।
২. আহতদের নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
৩. ঘটনাস্থলে শিক্ষকদের গায়ে সেনাসদস্যদের ‘হাত তোলার’ অভিযোগে নিঃশর্ত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
৪. নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫. বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ যুদ্ধবিমান বাতিল করে নতুন ও নিরাপদ বিমান চালু করতে হবে।
৬. প্রশিক্ষণ পদ্ধতি এবং এলাকা মানবিক ও নিরাপদভাবে পুনর্বিন্যাস করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, কেবল প্রেস বিজ্ঞপ্তি বা দুঃখপ্রকাশে তারা সন্তুষ্ট নয়। তারা চায় দোষীদের জবাবদিহি, ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি উপযুক্ত সম্মান, এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
ঘটনার পটভূমি
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলা বিমানবাহিনী ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিমানবাহিনীর একটি চীনে তৈরি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের একটি দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হয়। ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনার খবর পায় বেলা ১টা ১৮ মিনিটে এবং সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে। আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও ৭৮ জন। এ পর্যন্ত ২০ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিমানটি প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিস্থিতি ও প্রত্যাশা
মাইলস্টোন কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত এবং স্বচ্ছ জবাবদিহিতা দাবি করছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, জনবহুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকার উপর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণ ফ্লাইট কেন পরিচালিত হচ্ছে।
আগামী দিনের আন্দোলনের গতিপথ নির্ভর করবে কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া ও দাবি বাস্তবায়নের অগ্রগতির ওপর বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।