- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
ঢাকা, ২২ জুলাই
রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে। নিহতদের মধ্যে ২৫ জনই শিশু, রয়েছে একজন শিক্ষক ও একজন পাইলটও। এ ঘটনায় ৭৮ জন আহত হয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, “এটি আমাদের জন্য এক হৃদয়বিদারক ও কঠিন সময়। দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে ২০ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ৬টি মরদেহ এতটাই পুড়ে গেছে যে তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি, সেগুলোর ডিএনএ সংগ্রহ করে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চলছে।”
ডা. সায়েদুর জানান, বার্ন ইনস্টিটিউটে এখন পর্যন্ত ৪২ জন ভর্তি, তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা সংকটজনক এবং ৫ জন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তিনি আরও বলেন, সোমবার রাতেই এখানে ৮ জনের মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি রয়েছে ২৮ জন, যেখানে সবচেয়ে বেশি ১৫টি মরদেহ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো ৪ জনের মধ্যে একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে, বাকি দুজন আইসিইউতে। ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া একজন রোগীকেও মৃত অবস্থায় আনা হয়।
এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরপরই বার্ন ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চুক্তি অনুযায়ী বিদেশি সহায়তার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর হাইকমিশনার বর্তমানে সেখানে রোগীদের কেস স্টাডি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং টেকনিক্যাল পরামর্শের ভিত্তিতে চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ ঠিক করা হবে।
হাসপাতালে ভিড় না করার আহ্বান জানিয়ে ডা. সায়েদুর বলেন, “রক্তের চাহিদা এখন তেমন নেই, তবে নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন হতে পারে, তাই শুধু সেই গ্রুপের দাতাদের আসতে বলা হচ্ছে।”
দুর্ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই (F-7 BGI) প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে আছড়ে পড়ে। বিমানের ট্যাংকে বিস্ফোরণ ঘটায় পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মীরা জীবন বাঁচাতে ছুটতে থাকেন। ঘটনাটি ঘটে যখন স্কুলে ক্লাস চলছিল, ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।
ঘটনার পরপরই আহতদের উদ্ধার করে বার্ন ইনস্টিটিউট, সিএমএইচ, ঢাকা মেডিকেল ও ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। রক্ত দিতে ও স্বেচ্ছাসেবায় এগিয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা।
এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সরকার আজ মঙ্গলবার সারা দেশে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। একইসাথে দেশের সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে আহত ও নিহতদের জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।