- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
বান্দরবানের আলীকদমে পাহাড়ি ট্র্যাকিং ট্যুরে অংশ নিতে গিয়ে স্মৃতি আক্তার নামে এক নারী পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় আলোচিত ফেসবুক গ্রুপ 'ট্যুর এক্সপার্ট' এর অ্যাডমিন বর্ষা ইসলাম বৃষ্টিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ এনে নিহতের পরিবার মামলা দায়ের করলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা জহির উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন, শনিবার দুপুরে বর্ষা ইসলামকে গ্রেফতার করে বান্দরবান আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় রুজু হয়েছে, যেখানে অবহেলা বা অসতর্কতার কারণে মৃত্যু ঘটলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রথম দিকে নিছক একটি অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর মনে হলেও, এই ঘটনা রূপ নেয় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায়। ৮ জুন বর্ষা ইসলামের নেতৃত্বে 'ট্যুর এক্সপার্ট' গ্রুপের একটি দল বান্দরবানের আলীকদমে পৌঁছে রুংরাং-ক্রিসতং ট্র্যাকিংয়ে অংশ নেয়। ৯ জুন তারা যাত্রা শুরু করে বিভক্ত হয়ে দুটি দলে। বর্ষা নিজে ১২ জন ও এক গাইডসহ একটি রুটে যাত্রা করেন, আরেকটি দল যায় আলীকদম সদরের পথে—গাইড ছাড়াই।
এই দ্বিতীয় দলেই ছিলেন স্মৃতি আক্তার। ১১ জুন পাহাড়ি ঢলে শামুক ঝর্ণা এলাকায় নিখোঁজ হন তিনজন। একদিন পর ১২ জুন উদ্ধার করা হয় শেখ জুবাইরুল ইসলামের মরদেহ, আর ১৩ জুন স্মৃতি আক্তারের মরদেহ পাওয়া যায় তৈন খালের মোড় থেকে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন মো. হাসান চৌধুরী, যিনি ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন বলে জানা গেছে।
নিহত স্মৃতির বাবা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “বর্ষা ইসলাম পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়েই এ ধরনের বিপজ্জনক ট্র্যাকিং ট্যুর আয়োজন করেছেন। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি না নেওয়া, পর্যাপ্ত গাইড না থাকা এবং আবহাওয়ার সতর্কতা উপেক্ষার দায় এড়ানো যায় না। আমার মেয়ের মৃত্যু সরাসরি বর্ষার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ফল।”
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বর্ষা ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি ওই দুর্ঘটনার সময় অন্য একটি পাঁচ দিনের ট্যুর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। মৃত স্মৃতি আক্তার যেই দলে ছিলেন, তার নেতৃত্বে ছিলেন নিখোঁজ মো. হাসান চৌধুরী। বর্ষা নিজেকে দায়মুক্ত দাবি করে বলেছেন, “আমি নিজে দুর্ঘটনাস্থলে ছিলাম না, দায়িত্বে ছিল কো-অপারেটর।”
বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, “এই ঘটনা পর্যটন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য একটি সতর্ক সংকেত। পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটক আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে অপারেটরদের আইন মেনে চলা, প্রশিক্ষিত গাইড ব্যবহার ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস মেনে চলা জরুরি। তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনায় পর্যটন খাতে ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ ও অপেশাদার ট্যুর পরিচালকদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ট্র্যাকিং আয়োজন যেমন বেআইনি, তেমনি প্রাণহানির দায় থেকেও রেহাই পাওয়া যায় না।
বান্দরবানের এই ট্র্যাজেডি একদিকে যেমন স্মৃতি আক্তারের পরিবারের জন্য শোকের, অন্যদিকে পর্যটন নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ঘাটতির দিকটিও তুলে ধরেছে।
ছবি: বর্ষা ইসলাম (সংগৃহীত)