- ১৫ অক্টোবর, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার | PNN:
বাংলাদেশের জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সাহিত্যজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, লেখক রকিব হাসান আর নেই। বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রকিব হাসান দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন এবং নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাচ্ছিলেন। বুধবার ডায়ালাইসিস শুরু হওয়ার আগেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। তবে বাবার চাকরির সুবাদে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখানেই শুরু হয় তাঁর পড়াশোনা, পরবর্তীতে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। কর্মজীবনের শুরুটা হয়েছিল বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি চাকরির মাধ্যমে, কিন্তু অফিসের বাঁধাধরা জীবনে মন টেকেনি তাঁর। শেষ পর্যন্ত কলমকেই বেছে নেন জীবনের একমাত্র পেশা হিসেবে।
রকিব হাসানের লেখকজীবনের শুরু সেবা প্রকাশনীর হাত ধরে। প্রথমদিকে তিনি অনুবাদ লিখতেন, পরে নিজস্ব সৃষ্ট চরিত্র ও কাহিনি দিয়ে জয় করেন কিশোর পাঠকের মন। তাঁর হাতে জন্ম নেয় বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দা—যার নায়ক কিশোর, মুসা আর রবিন প্রজন্মের পর প্রজন্মকে করেছে মুগ্ধ।
শুধু তিন গোয়েন্দা নয়, তিনি লিখেছেন তিন বন্ধু, গোয়েন্দা কিশোর মুসা রবিন, রেজা-সুজা সিরিজসহ অসংখ্য জনপ্রিয় বই। তিন গোয়েন্দা সিরিজের বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬০-এ, আর অনুবাদ করেছেন প্রায় ৩০টিরও বেশি বিশ্বখ্যাত ক্লাসিক। তাঁর অনুবাদকর্মের মধ্যে রয়েছে জুল ভার্ন, ফার্লে মোয়াট, জেরাল্ড ডুরেল, এরিক ফন দানিকেন, এমনকি ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলাও।
ছোটদের জন্য রোমাঞ্চকর কাহিনি লেখা ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকদের জন্যও কিছু রহস্য-থ্রিলার রচনা করেছেন তিনি। সায়েন্স ফিকশনেও ছিল তাঁর হাতেখড়ি। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি একসময় রহস্যপত্রিকা-এর সহকারী সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেছেন।
রকিব হাসান ছিলেন ভীষণ প্রচারবিমুখ একজন মানুষ। কিন্তু তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলো আজও বেঁচে আছে কিশোর-তরুণদের কল্পনার জগতে। কয়েক প্রজন্মের পাঠকের শৈশব ও কৈশোরে যে লেখক মিশে আছেন অবিচ্ছেদ্যভাবে, তাঁর চলে যাওয়া বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনের এক বড় শূন্যতা তৈরি করেছে।
বাংলা কিশোর সাহিত্য যে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে, তার ভিত্তি রচনা করেছিলেন রকিব হাসান। তাঁর সৃষ্টি ও স্মৃতি বেঁচে থাকবে কোটি পাঠকের হৃদয়ে।