- ১৫ অক্টোবর, ২০২৫
PNN নিউজ ডেস্ক | খুলনা:
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) বহির্বিভাগে চলছে এক ভয়াবহ কমিশন বাণিজ্য। বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসকদের মধ্যে টেস্টের জন্য নেওয়া অর্থের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কমিশন যাচ্ছে চিকিৎসকদের পকেটে। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বিনা টেস্টেই রোগীর জন্য রিপোর্ট প্রস্তুত করছে, ফলে রোগীরা সঠিক রোগ নির্ণয়ের সুযোগ পাচ্ছেন না। এর ফলে একদিকে যেমন রোগীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তেমনি চিকিৎসাব্যবস্থার নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
নতুন তথ্য অনুসারে, রোগী সেজে বেশ কিছু দিন ধরে খুমেক হাসপাতালের সামনে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি প্রকাশ পায়। একাধিক রোগীকে দেখিয়ে জানা গেছে, তাদের কাছ থেকে নেওয়া টেস্টের জন্য মূল্য চাওয়া হলেও অনেক সেন্টার তা নিয়মমাফিক সম্পাদিত করেনি, অথচ পকেটে আসছে বড় অংকের কমিশন।
উদয়ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একজন ম্যানেজার জানান, “যদি আউটডোরের চিকিৎসকদের কমিশন না দেই, তাহলে রোগী পাব না। চিকিৎসকদের সঙ্গে কমিশন না দিলে ব্যবসা চলানো সম্ভব নয়।” খুলনা হেলথ গার্ডেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার মো. রিয়াছাদও একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “কখনো ২৫-৩০ শতাংশ কমিশন দেয়া হতো, কিন্তু এখন রেট বেড়েছে এবং যারা বেশি কমিশন দেবে, চিকিৎসকরা তাদের কাছে রোগী পাঠাবেন।”
বহির্বিভাগের একাধিক চিকিৎসক, বিশেষ করে আউটসোর্সিং কর্মচারীরা জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা নিয়মিত বেতন পান না এবং এই কারণে কমিশন পেতে তারা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে সমঝোতা করে ১০ শতাংশ টাকা আদায় করেন।
এমন পরিস্থিতিতে, ৯ অক্টোবর খুমেক হাসপাতালের পরিচালক কর্তৃক জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, হাসপাতালের ভিতরে কোনো সাংবাদিক রোগীর সাক্ষাৎকার, ছবি বা তথ্য সংগ্রহ করতে চাইলে পরিচালকের লিখিত অনুমতি নিতে হবে। কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগকে অনেকেই সংবাদ সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছেন।
বিষয়টি নিয়ে খুমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, "আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি, তবে আমরা যদি এ ধরনের ঘটনা জানতে পারি, তবে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
এদিকে, একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা জানান, উচ্চ কমিশনের চাপে ব্যবসা চালানো আর সম্ভব হচ্ছিল না। ফাস্ট কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক আবু শাহাদাৎ হোসেন বলেন, “এত উচ্চ কমিশন দিয়ে সঠিক ডায়াগনসিস করে প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব নয়, তাই ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।”
এভাবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চলমান কমিশন বাণিজ্য ও প্রতারণার ঘটনা পুরো চিকিৎসাব্যবস্থার জন্য বড় ধরনের সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগীদের জন্য নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও নৈতিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠছে।