- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
PNN নিউজ ডেস্ক | ঢাকা:
দেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে এ বিষয়টি উঠে আসে। "অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন: রাজনৈতিক দলের কাছে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা" শীর্ষক এই বৈঠকের আয়োজন করে একশনএইড বাংলাদেশের সুশীল প্রকল্প ও প্রথম আলো। সহযোগিতায় ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে বক্তারা সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বৈঠকে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আগামী নির্বাচনে জনগণই পাহারা দেবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গৌণ হবে।” তিনি আরও বলেন, "দেশের বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নতুন কমিশন গঠন করবে এবং সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত গ্রহণ করবে।"
জামায়াতে ইসলামী নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, "এখনো পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি আসেনি। যদি নির্বাচনে অনিয়ম হয়, তবে তা বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেওয়া উচিত।"
এছাড়া, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।”
গোলটেবিল বৈঠকে নারীদের ভোটাধিকার এবং নির্বাচনে তাদের প্রতিনিধিত্বের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, "নারীরা ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে আস্থার সংকটের মধ্যে রয়েছেন। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে।"
নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন বলেন, "যারা ক্ষমতায় আসবেন, তাদেরকে শুধু পুরুষদের নয়, সকল জনগণের নেতা হতে হবে, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগণের জন্য তাদের কাজ করতে হবে।"
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, "সংখ্যালঘু আদিবাসীদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ কম, তাই তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।" তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসী জনগণের অধিকার, ভূমির অধিকার এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দিতে হবে।”
গোলটেবিল বৈঠকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়েও আলোচনা হয়। বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, "বাংলাদেশের গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, যা গণতন্ত্রের শক্তির অন্যতম দিক।"
নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সহিংসতার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিভিন্ন বক্তা। তারা সকল রাজনৈতিক দলকে সহিংসতা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান এবং নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন।
গোলটেবিল বৈঠকের শেষে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, "রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা দায়িত্বে থাকবেন, তাদেরকে মনে রাখতে হবে যে দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।"
এ বৈঠকে সকল বক্তা একমত হন যে, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শান্তিপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা এবং সকল পক্ষের সহযোগিতা অপরিহার্য।