Friday, December 5, 2025

সুদানের কালোগিতে আরএসএফের হামলায় শিশু–নিহতসহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৭


ছবি; সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)–এর সদস্যরা ১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে সুদানি সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ)–এর ২২তম পদাতিক ডিভিশনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করছে, বাবানুসা, সুদান। (সংগৃহীত । আল জাজিরা । সোশ্যাল মিডিয়া/রয়টার্স]

আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN 

সুদানের দক্ষিণ কোরদোফান অঙ্গরাজ্যের কালোগি শহরে আরএসএফ (র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস)–এর ধারাবাহিক হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৪৭ জনে। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৫০ জন। সরকার–সমর্থিত সুদানি সেনাবাহিনী (এসএএফ)–এর দুই শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার প্রথমে একটি শিশু–বিদ্যালয়ে (কিন্ডারগার্টেন) হামলা চালায় আরএসএফ। পরে আহতদের উদ্ধার ও সহায়তায় জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষের ওপর দ্বিতীয় দফা হামলা চালানো হয়। একই দিনে শহরের হাসপাতাল ও একটি সরকারি ভবনেও বোমা নিক্ষেপ করা হয়।

সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুরুতর আহত কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এর আগে সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক জানিয়েছিল, আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহার করে চালানো ওই হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চার শিশু ও দুই নারী ছিলেন। সংস্থাটি অভিযোগ করে বলেছে, আরএসএফ ও তাদের মিত্র এসপিএলএম-নর্থ (আল–হিলু) একযোগে শিশু–বিদ্যালয়সহ বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, কোরদোফান অঞ্চলে আবারও গণ–অত্যাচারের ঢেউ নামতে পারে। আরএসএফ এবং এসএএফের মধ্যে তীব্র লড়াই মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, এল–ফাশারে যে গণহত্যা হয়েছিল, ঠিক তারই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে কোরদোফানে। গত মাসে এল–ফাশার আরএসএফের দখলে যাওয়ার আগে জাতিসংঘ একাধিকবার গণ–নিহতের আশঙ্কা তুলে ধরলেও তা গুরুত্ব পায়নি।

অক্টোবরের শেষ দিক থেকে উত্তর কোরদোফানের বারা শহর দখলের পর আরএসএফ আকাশ হামলা, আর্টিলারি ও টার্গেটেড কিলিংয়ের মাধ্যমে অন্তত ২৬৯ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে প্রতিশোধমূলক হামলা, নির্বিচার আটক, যৌন সহিংসতা ও শিশুদের জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়োগের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

এই সপ্তাহে আরএসএফ পশ্চিম কোরদোফানের বাবনুসা শহর দখলের দাবি করেছে। যদিও সুদানি সেনাবাহিনী এই দাবি অস্বীকার করেছে।

কোরদোফান আরএসএফের নিয়ন্ত্রিত দারফুর অঞ্চলের পূর্ব দিক এবং সরকারের নিয়ন্ত্রিত উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের মাঝামাঝি অবস্থানে। ফলে অঞ্চলটি দুই পক্ষের জন্যই অত্যন্ত কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ।

এল–ওবেইদসহ বড় শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ পেলে আরএসএফ রাজধানী খার্তুমের দিকে অগ্রসর হওয়ার সরাসরি পথ পাবে। এ কারণে সেখানে সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এল–ফাশার দখলের পর সেখানে গণ–হত্যার প্রমাণ মিলেছে স্যাটেলাইট চিত্রে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস একে “একটি বাস্তব যুদ্ধাপরাধের চিত্র” বলে অভিহিত করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরএসএফের উপনেতা আবদুররহিম দাগালোসহ কয়েকজনের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

সুদানে গৃহযুদ্ধ চলছে টানা তিন বছর ধরে। দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলছে। আর ক্রমেই গভীর হয়ে পড়ছে মানবিক সংকট।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন