Friday, December 5, 2025

পুতিন-মোদির নয়াদিল্লি বৈঠক: ইউক্রেন সংকট ও বাণিজ্য ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সূচনা


ছবিঃ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবন রাষ্ট্রপতি ভবনে (রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন) আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে করমর্দন করছেন। (সংগৃহীত । আল জাজিরা। সাজ্জাদ হুসাইন/এএফপি]

আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN 

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার নয়াদিল্লিতে দিনব্যাপী শীর্ষ বৈঠক শুরু করেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা, রাশিয়া–ভারত বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক আলোচনার চাপ সব মিলিয়ে এই বৈঠকের ওপর আন্তর্জাতিক নজর ছিল তীব্র।

এটি পুতিনের ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার হামলার পর প্রথম ভারত সফর। যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বাড়লেও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ান তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের কূটনৈতিক সমীকরণ আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

বৈঠকের শুরুতেই মোদি বলেন, “ভারত কখনো নিরপেক্ষ নয়। ভারতের অবস্থান শান্তির পক্ষে। আমরা যেকোনো শান্তি প্রচেষ্টাকে সমর্থন করি।” পুতিনও মোদির শান্তি–উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং জানান যে ইউক্রেন সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তাঁরা ভারতকে অবহিত রেখেছেন।

রাশিয়া ও ভারত দীর্ঘদিনের কৌশলগত অংশীদার। মস্কো ইতোমধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। দুই দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে। ২০২৪ সালে দুই দেশের বাণিজ্য ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৬৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

পুতিন শুক্রবার রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন তিনি। হায়দরাবাদ হাউসে মোদির সঙ্গে মূল বৈঠকে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও বাণিজ্য ইস্যুতে আলোচনা হয়।

রাশিয়ার তেল আমদানি নিয়ে ভারত–যুক্তরাষ্ট্র টানাপোড়েন বাড়ছে। সম্প্রতি রাশিয়ার লুকওয়েল ও রসনেফটের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জোরদার হওয়ায় ভারতের তেল আমদানির উপরও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ভারত জানিয়েছে, কেবল তাদের নয় পশ্চিমা দেশগুলোও নিজেদের স্বার্থে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করছে।

আরেকদিকে, রাশিয়ার অস্ত্র ক্রয়ের বিষয়েও পশ্চিমা চাপ রয়েছে। মস্কো চায় ভারত আরও এস–৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সু–৫৭ যুদ্ধবিমান কিনুক।

পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও ভারত আইসিসির সদস্য নয়, ফলে তাঁর সফরে কোনো বাধা ছিল না। বৃহস্পতিবার মোদি নিজেই বিমানবন্দরে গিয়ে পুতিনকে স্বাগত জানান এবং ব্যক্তিগত নৈশভোজে অতিথি করেন যা আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সফরের মাধ্যমে ভারত দেখাতে চেয়েছে যে পশ্চিমাদের চাপ থাকলেও তাদের পররাষ্ট্রনীতি স্বাধীন; আর রাশিয়ার জন্যও এটি ছিল দেখানোর সুযোগ যে তারা বৈশ্বিক অঙ্গনে বিচ্ছিন্ন নয়। পুতিন শুক্রবার রাতেই ভারত ছাড়বেন।

এই বৈঠক ঘিরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন মোড় নিলেও ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক ভূরাজনীতির চাপ কমছে না এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন