- ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন করল তাদের ‘জাতীয় সমাবেশ ২০২৫’। শনিবার সকাল থেকে রাজধানীমুখী মিছিল ও স্লোগানে উদ্যান ও আশপাশের এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। দলটির দাবি—এটি স্মরণকালের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সমাবেশ হতে চলেছে, যার মাধ্যমে নতুন করে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি ও রাজনৈতিক অবস্থান জানান দিতে চায় জামায়াত।
সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে সাইফুল্লাহ মানসুরের উপস্থাপনায় সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাবেশের প্রথম পর্ব শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মিছিলের সারি শাহবাগ, টিএসসি, হাইকোর্ট, মৎস্য ভবন হয়ে উদ্যানমুখী হতে থাকে। দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ হাতে, জামায়াতের লোগো খচিত টি-শার্ট ও পতাকা নিয়ে নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হন।
দুপুর ২টায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশের মূল পর্ব। এর আগে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে উদ্যানে প্রবেশ করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তাকে স্বাগত জানাতে রাস্তার দু’পাশে স্লোগানে মুখরিত হন উপস্থিত নেতা-কর্মীরা।
জানা গেছে, সমাবেশ সফল করতে সারাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার বাস, কয়েক জোড়া ট্রেন এবং লঞ্চে করে রাজধানীতে এসেছে লাখো নেতাকর্মী। শুধু নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা থেকেই এসেছে ৩০ হাজারের বেশি কর্মী। সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশালসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা থেকেই হাজার হাজার লোক ঢাকায় এসেছেন।
সমাবেশস্থলে ৩৩টি এলইডি স্ক্রিন, ৩০০ মাইক, ভ্রাম্যমাণ টয়লেট, মেডিকেল বুথ, অজুর জায়গা ও নামাজের ব্যবস্থাসহ সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করতে নিয়োজিত আছেন প্রায় ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়িয়ে আশপাশের রাস্তায় শত শত বাসে অবস্থান নিতে দেখা গেছে আগতদের।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এই সমাবেশ থেকে নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা দেবেন বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা। তার ভাষণে থাকবে ‘চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনায় জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা’, গণহত্যার বিচার, রাজনৈতিক সংস্কার এবং সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন—এই বিষয়ে দিকনির্দেশনা।
সমাবেশে জামায়াতের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয়:
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা
অতীতের সব গণহত্যার বিচার
প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কার
‘জুলাই সনদ’ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের পুনর্বাসন
সংখ্যানুপাতিক (PR) পদ্ধতিতে নির্বাচন
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ
এছাড়া সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কর্মপরিষদের নেতারা, প্রবাসী প্রতিনিধি ও জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যরা। বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
দলটির নেতারা বলছেন, পূর্বে পল্টন, বায়তুল মোকাররম, নয়াপল্টন এলাকায় কর্মসূচি করলেও এবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই বিশাল আয়োজন করে দলটি নিজেদের সাংগঠনিক পুনরুত্থানের বার্তা দিতে চায়। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে চলে সংগঠনের পুনর্বিন্যাস ও তৃণমূল তৎপরতা। আজকের সমাবেশকে তারা দেখছেন আগামী নির্বাচন ও জাতীয় রাজনীতির জন্য একটি 'টার্নিং পয়েন্ট' হিসেবে।