- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মধ্যে চলমান সংবিধান সংস্কারের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। তবে বিএনপি ও কয়েকটি দল এখনও বেশ কিছু প্রস্তাবে ভিন্নমত প্রকাশ করেছে।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার ব্যাপক কেন্দ্রীকরণ ভবিষ্যতে স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদী শাসনের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। তাই সংবিধান সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কার্যকর ভারসাম্য নিশ্চিত করা।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কতটা কমছে
এছাড়া মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, প্রেস কাউন্সিল ও আইন কমিশনে রাষ্ট্রপতি সরাসরি নিয়োগ দিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান বা সংসদ নেতা হতে পারবেন না।
জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর নয়, এখন মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিধান যুক্ত হচ্ছে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈঠকে বিরোধীদলের নেতা বা তাদের উপনেতার উপস্থিতিও বাধ্যতামূলক।
সংবিধান সংস্কার কমিশন এবং ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান, ডিজিএফআই ও এনএসআই প্রধান, অ্যাটর্নি জেনারেল, তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, প্রেস কাউন্সিল, আইন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়োগ রাষ্ট্রপতির হাতে থাকবে।
সংসদীয় কমিটিগুলোতে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশেষ করে অর্থবিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “সংবিধানের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খানিকটা হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন ও গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর অবারিত ক্ষমতা থাকবে না। সব না হলেও অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে।”
বিএনপি, ১২-দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের কিছু প্রস্তাবে এখনও ভিন্নমত রয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতির হাতে নিয়োগ ক্ষমতা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে উচ্চকক্ষে পিআর ভিত্তিক আসন বিতরণ এবং কিছু সংসদীয় কমিটিতে সভাপতি পদে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ বিষয়ে তাদের আপত্তি আছে।
সংবিধান সংস্কারের এই প্রক্রিয়া এবং ঐকমত্য আগামী দিনের রাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্য ও গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।