Tuesday, October 14, 2025

সেনাপ্রধানের উদ্যোগে বদলে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির দুর্গম দুই গ্রামের জীবন


ছবি: বাংলাদেশের সেনাপ্রধান (সংগৃহীত)

খাগড়াছড়ির দুর্গম অঞ্চলের দুইটি গ্রাম — কারিগর পাড়া ও রেজামনি পাড়া — দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল উন্নয়নের দিক থেকে। নেই পাকা রাস্তা, নেই বিদ্যুৎ সংযোগ, আর নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। পাঁচ শতাধিক মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের একটি সিদ্ধান্তে বদলে যেতে শুরু করেছে এই দুই গ্রামের চিত্র।

প্রায় তিন মাস আগে রেজামনি পাড়া আর্মি ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে সেনাপ্রধান সরাসরি কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাদের দুর্ভোগ শুনেই তাৎক্ষণিকভাবে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থার নির্দেশ দেন তিনি। এরপরই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয় একটি সোলার পানির সরবরাহ প্রকল্প।

১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হবে। সোলার সিস্টেমে প্রতিদিন ৪ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাজলক্ষ্মী অ্যান্ড রাজ পিউ ইঞ্জিনিয়ারিং সল্যুশন।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব বড়ুয়া জানান, “এই প্রকল্পে স্থাপন করা হয়েছে ১ হাজার লিটারের দুটি ও ২ হাজার লিটারের একটি পানির ট্যাংকি। এই পানির সুবিধা পাবেন কারিগর পাড়া ও রেজামনি পাড়ার সব বাসিন্দা।”

৭০ বছর বয়সি কৃষক সুবীন্দ্র লাল কারবারি বলেন, “আগে আমাদের বিশুদ্ধ পানি পেতে কুয়া বা টিউবওয়েলের ওপর নির্ভর করতে হতো, যেখানে প্রচুর আয়রন থাকত। সেনাপ্রধানের এই উদ্যোগ আমাদের কাছে উপরওয়ালার আশীর্বাদ।”

সেনাবাহিনীর হাত ধরে পার্বত্য অঞ্চলে চালু হয়েছে সীমান্ত সড়ক, যেটির মাধ্যমে আগে যেখানে পৌঁছাতে দুই-তিন দিন সময় লাগত, এখন তা সম্ভব হচ্ছে মাত্র কয়েক ঘণ্টায়। সেনাবাহিনীর সহায়তায় স্থাপন হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিতরণ করা হচ্ছে শিক্ষা উপকরণ। এইসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখন উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের নামকরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন।

খাগড়াছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি মেডিকেল ক্যাম্পে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এখানে চারজন ডাক্তারসহ নারীদের জন্য আলাদা গাইনি বিশেষজ্ঞও রয়েছেন। বিনামূল্যে উন্নত মানের ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।

গোগড়াছড়ি থেকে আসা এক বাবা জানান, তার ছয় বছর বয়সি সন্তানের হাতের ইনফেকশন সেনাবাহিনীর চিকিৎসায় অনেকটাই ভালো হয়েছে। জরুরি রোগীদের জন্য সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার করে চট্টগ্রামের হাসপাতালেও পাঠানোর নজির রয়েছে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত এক বছরে তারা মোট ১৯,৯১২ জনকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে, যার মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ১২,৫৫৪ জন এবং বাঙালি ৭,৩৫৮ জন।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন