Tuesday, October 14, 2025

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু, ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিলেন আহত আন্দোলনকারী


ফাইল ছবিঃ শেখ হাসিনা (সংগৃহীত)

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ মামলার সূচনা বক্তব্য ও প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দির মধ্য দিয়ে এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এই মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন। মামলার একমাত্র গ্রেপ্তার হওয়া আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ ইতিমধ্যেই দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ হিসেবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

বিচার শুরু হওয়ার দিনে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “জুলাই বিপ্লবে যে সহিংসতা ও গণহত্যা হয়েছে, তা ইতিহাসে এক ভয়াবহ অধ্যায়। ৩৬ দিনের মধ্যে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পঙ্গু এবং প্রায় ২ হাজার নিরস্ত্র নাগরিক নিহত হয়েছেন।” তিনি অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “শেখ হাসিনা ছিলেন সব সিদ্ধান্তের কেন্দ্রবিন্দুতে। একনায়কতান্ত্রিকভাবে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল তাঁর সরাসরি নিয়ন্ত্রণে।” তিনি দাবি করেন, অভিযুক্ত তিনজন যৌথ অপরাধমূলক পরিকল্পনা এবং কমান্ড দায়বদ্ধতার আওতায় এসব অপরাধে জড়িত।

প্রথম সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির হন খোকন চন্দ্র বর্মণ, যিনি গত বছরের আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন। তিনি বলেন, “৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ আমাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। আমার হাত, পা এবং মুখে গুলি লাগে।” আদালতে তিনি মাস্ক খুলে তাঁর বিকৃত মুখ দেখান এবং বলেন, চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল।

জবানবন্দিতে তিনি শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান, ওবায়দুল কাদের, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন ও শামীম ওসমানকে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেন।

পলাতক আসামিদের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন জেরা করে জানতে চান, সাক্ষীর অভিযোগের লিখিত প্রমাণ আছে কি না। জবাবে খোকন চন্দ্র বলেন, “না, লিখিত প্রমাণ নেই। তবে আমি নিজের শরীরে গুলি খেয়েছি।” তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগে অনড় থাকেন এবং বলেন, “পুলিশ গুলি করেছে, ছাত্ররা নয়।”

এই মামলাটি গত বছরের ১৪ অক্টোবর পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম মামলা। ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে গুম, হত্যা, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের একাধিক অভিযোগ।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি ১১টি প্রতীকী ঘটনার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হবে, যা আন্তর্জাতিক আইনের মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আজ সোমবারও মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে আরও সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হবে।

এই বিচার প্রক্রিয়া দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসানে এক নতুন দিকচিহ্ন হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। যদিও মামলাটিকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তারপরও অনেকেই আশা করছেন—এই বিচার বাংলাদেশের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এক পরীক্ষামূলক অধ্যায় হয়ে উঠবে।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন