- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
রাষ্ট্রীয় সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত জুলাই জাতীয় সনদকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে তৃতীয় ধাপের কাজ শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই পর্বে মূলত সনদে থাকা সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর গ্রহণের প্রক্রিয়া সামনে রেখে বিশেষজ্ঞ ও দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চালাবে কমিশন।
কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে যেসব প্রস্তাবে আংশিক বা পূর্ণ ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়নের উপযোগী কাঠামো গড়ে তোলাই হবে এই পর্বের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে, কোন সুপারিশ অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য এবং কোনগুলো সংবিধান সংশোধন ছাড়া সম্ভব নয়, তা চিহ্নিত করতে আইনবিদ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে।
কমিশনের এক সদস্য জানান, “এই ধাপে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ব্যবধান কমিয়ে আনতে চাই। বিশেষ করে যেসব দলে এখনও ভিন্নমত আছে বা সনদে সই করতে দ্বিধা প্রকাশ করছে, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধান খোঁজা হবে।”
তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে ৩০টি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে, যার মধ্যে ৯টি বিষয়ে সর্বসম্মত মত পাওয়া গেছে। তবে বাকি ১০টি বিষয়ে কিছু দলের ভিন্নমত রয়ে গেছে, যা তৃতীয় ধাপে আলোচনার মুখ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উপস্থিত ছিলেন সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
মনির হায়দার জানান, “আমরা চাই এমন একটি সনদ প্রস্তুত করতে যা রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য, বাস্তবভিত্তিক এবং আইনত টেকসই হয়। এজন্য সব পক্ষকে যুক্ত করে, ধাপে ধাপে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য রূপরেখা তৈরি করা হবে।”
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর ছয়টি পৃথক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। তাদের দেওয়া ১৬৬টি সুপারিশের ভিত্তিতে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এসব সুপারিশের মধ্যে কিছু ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ হিসেবে বাস্তবায়ন চলছে। আর যেগুলোর জন্য আইনি কাঠামো ও রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন, সেগুলোর বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরির লক্ষ্যে চলছে এই তৃতীয় ধাপের কার্যক্রম।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আশা করছে, সকল দলের যুক্তিসংগত মতামতের ভিত্তিতে একটি কার্যকর, গ্রহণযোগ্য ও আইনি ভিত্তিসম্পন্ন জাতীয় সনদ প্রণয়ন সম্ভব হবে, যা আগামী সরকার গঠনের পর দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার রূপে পরিণত হবে।