- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় ৩১ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থী বিক্ষোভ আজ দুপুর থেকে ভয়াবহ রূপ নেয়। সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে কমপক্ষে ৭৫ জন আহত হয়েছেন এবং একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সচিবালয়ের ১ নম্বর গেট থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও জিপিও মোড় এলাকায়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সংঘর্ষের সূচনা হয় যখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। জবাবে শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা আড়াইটার দিকে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী সচিবালয়ের সামনে জড়ো হয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ দাবি করেন। শিক্ষার্থীদের স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে—“আমার ভাই মরল কেন? প্রশাসন জবাব দে।”
সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের অনেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। নাম জানা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন মো. হাসান, তানভীর, সামিরা, ইমন, মাহি, শাহেদ, ইমরান, রিফাত, বিজনসহ অনেকেই।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন একজন শিক্ষার্থী মেহবুব ইমন বলেন, “আমরা শুধু আমাদের বন্ধুদের মৃত্যুতে শোক জানাতে এসেছিলাম। সরকারের দায়িত্বহীন আচরণ এবং গভীর রাতে পরীক্ষার স্থগিতাদেশে আমরা হতবাক। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জবাবে এমন বর্বরতা মেনে নেওয়া যায় না।”
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ মনসুর জানান, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে, তবে আরও তদন্ত চলছে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের একাধিকবার কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার দৃশ্য এবং সংঘর্ষের সময় একজন তরুণকে টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের মতে, “এই আন্দোলন রাজনৈতিক নয়, এটি জীবন ও ন্যায়ের প্রশ্ন। সহপাঠীদের মৃত্যুর দায় প্রশাসনের, এবং সেটার জবাবদিহি চাই।”
ঢাকা শহর আজ সেই উত্তপ্ত বাস্তবতার সাক্ষী—যেখানে একটি শিক্ষার্থী প্রাণহানির ঘটনায় শোক, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিলেমিশে আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। আন্দোলনের গতি ও ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নির্ভর করছে প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।