Tuesday, October 14, 2025

ঋণের চাপে অটোরিকশা চালকের আত্মহত্যা: চিরকুটে 'সুদ দিয়ো না, কিস্তি দিয়ো না'


প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত । ইন্টারনেট)

রাজশাহীর পবা উপজেলায় গতকাল বুধবার (১৬ জুলাই) শামসুদ্দিন (৩২) নামের এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহের পাশ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করেছে পুলিশ, যেখানে লেখা ছিল, "সুদ দিয়ো না, কিস্তি দিয়ো না।"

মৃত শামসুদ্দিনের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার তালন্দ বাজার এলাকার সামাসপুর গ্রামে। তার স্ত্রী শিলা খাতুন জানান, শামসুদ্দিনের প্রচুর ঋণ ছিল এবং তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। গতকাল বুধবারই একটি মামলার হাজিরার দিন ছিল। শিলা খাতুনের ধারণা, হাজিরা না দিয়েই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনায় তিনি পবা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শামসুদ্দিনের তানোরের তালন্দ বাজারে মোটরসাইকেল যন্ত্রাংশের দোকান ছিল। তিনি ঋণ করে একটি মাইক্রোবাস কিনেছিলেন। সেই মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় ভেঙে গেলে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। ঋণের কিস্তি শোধ করার জন্য তিনি আরও ঋণ করেন। একপর্যায়ে তার ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকে। প্রায় ছয় মাস আগে পাওনাদারদের এড়াতে তিনি দোকান বিক্রি করে সপরিবার ঢাকায় চলে যান। কিন্তু সেখানেও থাকতে না পেরে ফিরে এসে তারা উপজেলার নওহাটার কাজীপাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন। শিলা খাতুন শ্বশুরবাড়িতে থাকলেও, শামসুদ্দিন নওহাটা কলেজ মোড়ে একটি ছাত্রাবাসের কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতেন। পাওনাদারদের কাছ থেকে আত্মগোপন করার উদ্দেশ্যেই তিনি ওই ছাত্রাবাসে ছিলেন। গতকাল বিকেলে সেই ছাত্রাবাসের কক্ষে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পবা থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করেন।

পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, "খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দরজা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি বিষের বোতল ও একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ঋণের চাপেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।"

শামসুদ্দিনের স্ত্রী শিলা খাতুন বাদী হয়ে পবা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে শিলা খাতুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গতকাল বুধবার ঋণের মামলার হাজিরার দিন ছিল। দুপুরে শামসুদ্দিন বাড়িতে এলে হাজিরার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান যে হাজিরা দেননি এবং উকিলকে টাকা দিয়ে চলে এসেছেন। শিলা খাতুন স্বামীকে ভাত খেতে দিলেও, তরকারি আনতে যাওয়ার ফাঁকে তিনি না খেয়েই অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়ে যান। তার দুই মেয়ে বাবার গাড়ি চেপে ধরতে গেলে তিনি বলেন, "বাচ্চাদের ধর, আমি গাড়ি চালাতে যাব।" এরপর বিকেলে তার মৃত্যুর খবর আসে।

মরদেহের পাশে পাওয়া চিরকুটটি স্বামীর লেখা বলে নিশ্চিত করেছেন শিলা খাতুন। তিনি জানান, তার স্বামীর হাতের লেখা স্পষ্ট নয়। একটি মিষ্টির প্যাকেটের উল্টো পাশে তিনি তার বক্তব্য লিখে গেছেন।

ওই চিরকুটের শেষে শামসুদ্দিন লিখেছেন, "...সবাই ভালো থাকো। বিদায় নিচ্ছি।" ভেতরে এক জায়গায় লিখেছেন, "...সুদ দিয়ো না, কিস্তি দিয়ো না।" সুদের প্রসঙ্গ আরও এক-দুই জায়গায় লেখা থাকলেও, পুরো বাক্য মিলিয়ে পাঠ উদ্ধার করা যাচ্ছে না। চিরকুটের এক পাশে লেখা আছে, "আমার বাচ্চাটাকে ভালো থাকতে দিয়ো। পারলে মাফ করে দিয়ো। মা-ভাইকে কিছুই দিতে পারিনি।"

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন