Tuesday, October 14, 2025

রাশিয়ায় যুদ্ধে প্রাণ হারালেন রাজবাড়ীর প্রাক্তন সেনা সদস্য নজরুল ইসলাম


ছবিঃ নিহত অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নজরুল ইসলাম (সংগৃহীত)

স্টাফ রিপোর্টার | PNN: 

রাশিয়া গিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন রাজবাড়ীর অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নজরুল ইসলাম (৪৭)। সাত মাস ধরে নিখোঁজ থাকার পর গত ৮ অক্টোবর বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পরিবার। খবরটি পৌঁছানোর পর থেকেই নজরুলের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

নজরুল ইসলাম রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর চরপাড়া গ্রামের মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে। চার কন্যাসন্তানের জনক ছিলেন তিনি। বড় মেয়ে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, মেজো মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, আর ছোট দুই মেয়ের বয়স মাত্র ছয় ও পাঁচ বছর।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নজরুল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালে অবসর গ্রহণের আগে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কঙ্গোতেও দায়িত্ব পালন করেন। অবসরের পর স্থানীয় শ্রীপুর বাজারে মুদি দোকান খুললেও ব্যবসায় বড় লোকসানের কারণে আর্থিক সংকটে পড়েন।

এই সময় স্থানীয় দালাল ফরিদ হোসেন তাকে রাশিয়ার এক শপিংমলে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরির প্রলোভন দেখান। স্ত্রী আইরিন আক্তার বাধা দিলেও নজরুল সংসারের উন্নতির আশায় রাজি হন। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি রাশিয়ার উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেন।

সেখানে পৌঁছে তাকে সামরিক প্রশিক্ষণে নেওয়া হয় এবং পরে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়। পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলেও গত ৩০ এপ্রিল ছিল নজরুলের শেষ কথা। সে দিন তিনি স্ত্রীকে ফোনে বলেন, “আমার ফোন বন্ধ পেলে ধরে নিও আমি আর নেই।” এরপর থেকেই তার খোঁজ মেলেনি।

দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ৮ অক্টোবর বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় যে, নজরুল ইসলাম মারা গেছেন।

স্ত্রী আইরিন আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি অনেকবার বলেছিলাম, যেও না। এখন চার মেয়েকে নিয়ে কীভাবে বাঁচব? আমার একটাই অনুরোধ সরকার যেন আমার স্বামীর লাশটা ফিরিয়ে আনে।” নজরুলের বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট রহিম বলেন, “ফরিদ নামের দালাল আমার ভাইকে প্রতারণা করে রাশিয়ায় পাঠিয়েছে। সরকার যেন দ্রুত লাশ ফেরত আনার ব্যবস্থা করে।”

এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়া হক জানান, “সরকারি চিঠি এখনো পাইনি, তবে বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে লাশ ফেরত আনার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

স্থানীয়রা বলছেন, নজরুল ইসলামের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো গ্রামের বেদনা  জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেওয়া কতটা বিপজ্জনক, তার আরেকটি করুণ প্রমাণ রেখে গেলেন এই সাবেক সৈনিক।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন