Tuesday, October 14, 2025

পুলিশ হেফাজতে শিক্ষিকার রহস্যজনক মৃত্যু: ইনহেলারে বিষ, দায়িত্বরতদের বরখাস্ত


ফাইল ছবিঃ ফিরোজা আশরাবী (সংগৃহীত । দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস )

রাজধানীর ভাটারা থানায় পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় বিষপান করে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ফিরোজা আশরাবী (২৮) মারা গেছেন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পুলিশ দাবি করেছে, আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে তিনি অনলাইনে বিষ সংগ্রহ করে পরিকল্পিতভাবে থানায় বসেই পান করেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে, আটককৃত একজন নারীর কাছে পুলিশ হেফাজতে কীভাবে বিষ পৌঁছাল?


এই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এক উপপরিদর্শক এবং দুই নারী কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)-এর একজন ফিল্ড অফিসারসহ তৃতীয় লিঙ্গের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।


পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, আশরাবীর স্বামী ইলিয়াস কামাল রিসাদ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গত মার্চে তাদের বিয়ে হলেও পারিবারিক কারণে সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ৭ জুলাই আশরাবী অনলাইনের মাধ্যমে রাসায়নিক বিষ সংগ্রহ করেন। ৯ জুলাই রাতে তিনি পল্লবীতে স্বামীর বাসায় গিয়ে তাকে অজ্ঞান করে গোপনাঙ্গ কেটে দেন। এরপর তিনিই রিসাদকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান।


পরদিন, ১০ জুলাই সকালে রিসাদের স্বজনরা হাসপাতালে আশরাবীকে ঘিরে রাখলে তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চান। একই দিন বিকেলে পল্লবী থানার অনুরোধে ভাটারা থানা পুলিশ তাকে আটক করে নারী ও শিশু সহায়তা কক্ষে রাখে। সেই সময় আশরাবীর হাতে ফোন ছিল এবং হ্যান্ডকাফও পরানো ছিল না। ফলে তার বাইরের জিনিসপত্র গ্রহণের অনুমতি ছিল বলে পুলিশ উল্লেখ করেছে।


পুলিশ জানায়, আটক হওয়ার পর আশরাবী ব্লাস্টের প্রধান প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট মাহাপাড়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি তাদের ইনহেলার আনার অনুরোধ জানান। পরে ব্লাস্টের ফিল্ড অফিসার শোভার এবং তার সহকারী কণা আশরাবীর বাসা থেকে একটি ব্যাগ নিয়ে থানায় পৌঁছান। সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে সেই ব্যাগ আশরাবীর হাতে পৌঁছে দিলে তিনি ওষুধ খাওয়ার কথা বলে ব্যাগ থেকে বিষ পান করেন। থানার ভাষ্য অনুযায়ী, ইনহেলার হলেও এর মধ্য দিয়েই বিষ পৌঁছানো হয়েছিল ফিরোজা আশরাবীর কাছে।


পুলিশ আরও জানায়, বিষের গন্ধ টের পেয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারী কনস্টেবল নাসিমা এবং শারমিন বোতলটি ছিনিয়ে ফেললেও আশরাবী ততক্ষণে বিষ পান করে ফেলেন। তাকে দ্রুত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পর ১১ জুলাই সন্ধ্যায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


ভাটারা থানার ওসি রাকিবুল হাসান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, "ফিরোজা আশরাবী অনলাইনে বিষ অর্ডার করেছিলেন, তার কুরিয়ারের তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। তিনি পরিকল্পিতভাবে আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।" তবে তিনি স্বীকার করেন, "একজন পিএইচডি গবেষক এবং শিক্ষক হিসেবে আশরাবী কৌশলী ছিলেন। তার পরিকল্পনা বুঝতে আমাদের বিলম্ব হয়েছে। হয়তো শিক্ষক হিসেবে তাকে অতিরিক্ত সম্মান দেখানোয় আমাদের নারী কনস্টেবলরা কঠোর হননি।"

এই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ডিউটি অফিসার এসআই জামাল হোসেন এবং দুই নারী কনস্টেবল শারমিন ও অন্তঃসত্ত্বা নাসিমাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আশরাবীর কাছে বিষ পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে ব্লাস্টের ফিল্ড অফিসার শোভা এবং তার সহকারী কণার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেছে পুলিশ।


তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, "তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিষয়টি আরও তদন্তাধীন রয়েছে।"


পুলিশ ও মামলার তথ্য অনুযায়ী, রিসাদের আগেও একটি বিয়ে হয়েছিল; তার আগের স্ত্রী কানাডা প্রবাসী। আশরাবীরও আগে এক বিয়ে হয়েছে। দুজনের পরিবারের কেউই এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। এ ছাড়া রিসাদের একাধিক সম্পর্কের অভিযোগ নিয়ে দাম্পত্য কলহে বারবার ঝগড়া-বিবাদ দেখা যায়।


৯ জুলাই রাতে রিসার্চ সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখানোর অজুহাতে আশরাবী স্বামীর বাসায় যান এবং চায়ে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাকে অচেতন করেন। এরপর অজ্ঞান রিসাদের গোপনাঙ্গ কেটে দেন তিনি। রাত সাড়ে তিনটার দিকে জ্ঞান ফিরে রিসাদ দেখতে পান তিনি আহত এবং তখনই আশরাবী তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।


পুলিশ জানিয়েছে, আশরাবী দীর্ঘদিন ধরে ব্লাস্টের সঙ্গে আইনি পরামর্শের জন্য যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিলেন। সেই সূত্রেই তিনি ব্লাস্ট কর্মীদের মাধ্যমে থানায় বসেই নিজের কাছে বিষ আনান। এই বিষয়ে ব্লাস্ট থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তাদের প্রধান কার্যালয়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাংবাদিক পরিচয় জানার পর ফোন কেটে দেওয়া হয়।


সূত্রঃ দ্যা  ডেইলি ক্যাম্পাস 

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন