- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
প্রেস উইংয়ের গভীর অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই অ্যাকাউন্টটিতে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্র সচিব রীম আল-হাশিমির চুরি হওয়া ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে 'তামান্না আক্তার ইয়েসমান' পরিচয়ে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। প্রোফাইলটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে মনে হয় একজন উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক প্রচারক আওয়ামী লীগের পক্ষে সমর্থন করছেন।
প্রোফাইলের মেটাডেটা বিশ্লেষণে জানা যায়, এটি গত বছরের ২৪ নভেম্বর তৈরি করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। মাত্র সাত মাসের মধ্যে এই অ্যাকাউন্টে ১৪ হাজারেরও বেশি ফলোয়ার হয়েছে। প্রোফাইলের ছবি, ভিডিও ও বর্ণনা সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি করতে পারে যে, একজন প্রভাবশালী নারী নেতা আন্তর্জাতিক মঞ্চে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করছেন।
মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তির ছড়াছড়ি:
ফেসবুক পোস্টে, 'তামান্না আক্তার ইয়াসমান' একাধিক ভিত্তিহীন দাবি করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে:
সুইজারল্যান্ডের বিচারালয় রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩৩৪ জনকে ক্ষমা করে দিয়েছে।
রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার চেম্বার কোর্টগুলো একই রায় দিয়েছে।
ভারত ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বা করতে যাচ্ছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সাতটি নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা নিয়ে একটি চিঠি পাঠাচ্ছে।
জি-সেভেন সভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার দেখা হয়েছে।
১৭ জুনের একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে, আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাতিল করেছে।
১৭ জুনের আরেক পোস্টে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ যাতে স্বাধীনভাবে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
প্রেস উইংয়ের খন্ডন:
প্রেস উইং এসব দাবিকে 'সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা' বলে আখ্যায়িত করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে:
সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া বা অস্ট্রেলিয়ার চেম্বার কোর্টে রূপপুর প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ সম্পর্কিত কোনো মামলা হয়নি বা সেখানে কোনো রায়ও হয়নি।
ইনভেস্টিগেটিভ মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, রূপপুর প্রকল্প থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করা হয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন।
ভারত বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি বা তারা কোনো হুমকিও দেয়নি।
আয়ারল্যান্ডও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাতিল করেনি। অনুসন্ধানে এই দাবিগুলোর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
প্রচারণার ধরণ:
প্রেস উইংয়ের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ১ থেকে ১৫ জুন ২০২৫ তারিখের মধ্যে অ্যাকাউন্টটির ১০৩টি পোস্টের মধ্যে ৮৩টিতে (৮০ শতাংশ) রীম আল-হাশিমির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে এবং ১৮টিতে (১৭ শতাংশ) শেখ হাসিনার প্রশংসা করা হয়েছে। বাকি ৬টি পোস্টে নেতিবাচকভাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিশানা করা হয়েছে, যেমন বৈঠক বাতিল ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মিথ্যা দাবি করে। বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অধ্যাপক ইউনূস সম্পর্কিত লেখাগুলো নেতিবাচক, আর সর্বশেষ লেখাসহ সব লেখায় শেখ হাসিনাকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ ধরনের ভ্রান্ত তথ্যগুলো প্রাথমিকভাবে আওয়ামী লীগের ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে একাধিক প্ল্যাটফর্মে—এক্স (টুইটার), ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকে—ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই ধরনের অপপ্রচারের বিষয়ে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং-এর প্রতীক(ছবিঃআমার দেশ)