- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার | PNN:
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, বাংলাদেশে চলমান ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি শেষ হবে কি না, তা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করা নতুন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সংস্থাটির মিশন প্রধান চিফ ক্রিস পাপাজর্জিও বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
পাপাজর্জিও জানান, “নবনির্বাচিত সরকারকে এই কর্মসূচি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে মতামত প্রদানের সুযোগ দেওয়া যৌক্তিক। নির্বাচনের পর এপ্রিল বা মে মাসে উচ্চপর্যায়ের আরেকটি মিশন আসতে পারে এবং তখন যৌথ পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, চলমান কর্মসূচির অধীনে আইএমএফ ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে পাঁচ কিস্তিতে ৩৬৪ কোটি ডলার দিয়েছে। এখনো বাকি আছে ১৮৬ কোটি ডলার। তবে আগামী ডিসেম্বরে ষষ্ঠ কিস্তি পাওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত হতে পারে।
আইএমএফ রাজস্ব সংগ্রহকে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটির মতে, রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি না হলে সরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করতে পারবে না এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন হবে। বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার খুবই কম এবং অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যথাযথ কর প্রদান করছে না।
সংস্থাটি নীতি ও পরিকল্পনার পাশাপাশি বাস্তবায়নের গুরুত্বও তুলে ধরেছে। পাপাজর্জিও বলেন, “ছোট বা আংশিক সংস্কারের পরিবর্তে এখন দরকার সাহসী, কার্যকর এবং সহজে পালনযোগ্য সংস্কার।” তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অংশীদাররা বাংলাদেশের পাশে আছে, তবে দীর্ঘমেয়াদে দেশের স্বনির্ভরতা অর্জন করতে দেশীয় সম্পদ সংগ্রহ ক্ষমতা বাড়ানোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থনৈতিক খাতের বিষয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থার দুর্বলতা মোকাবেলায় ধারাবাহিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার ও ব্যাংক পরিচালনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া মুদ্রানীতি কঠোর রাখা এবং সুদহার কমানো না করাই সমীচীন।
আইএমএফ মনে করে, সামাজিক সুরক্ষা শুধুমাত্র দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য নয়, এটি সামাজিক স্থিতিশীলতা ও মানবিক মর্যাদা রক্ষার হাতিয়ার। নতুন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর নীতির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার আইএমএফ সরকারী দপ্তরের পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামিসহ কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। নতুন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর যাতে নীতি ধারাবাহিকতা থাকে এবং কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত হয়, তার জন্যই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।