- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক জটিলতা ও অনিশ্চয়তা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছে—এমন ইঙ্গিত মিলেছে লন্ডনে অনুষ্ঠিত আলোচিত বৈঠকে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টার আলোচনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা, যা দেশে স্বস্তির আবহ তৈরি করেছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় (লন্ডন সময়) ডরচেস্টার হোটেলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে প্রধান আলোচ্য ছিল আগামী নির্বাচনের সময় নির্ধারণ। বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে আগামী বছরের রমজানের আগেই, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। এ ঘোষণার মাধ্যমে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গুজবের অবসান হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এর আগে চলতি বছরের জুনে ঈদের আগে জাতির উদ্দেশে ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছিলেন। বিএনপি এই ঘোষণায় আপত্তি জানায় এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়। এই অবস্থায় শুক্রবারের বৈঠকটি হয়ে ওঠে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং তা এক ধরনের সমঝোতারও ইঙ্গিত দেয়। লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট। তারা বলেছে, দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পর এই ঐকমত্য জাতিকে স্বস্তি দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বিবৃতিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “অধ্যাপক ইউনূস তাঁর প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন, আর তারেক রহমানও পরিণত নেতৃত্বের সাহস দেখিয়েছেন।” তবে সবাই সন্তুষ্ট নন। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যৌথ ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, সরকারের উচিত ছিল নির্বাচন নিয়ে সব দলকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্মিলিতভাবে ঘোষণা দেওয়া। এনসিপির মতে, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও বিচার সংস্কারের রোডম্যাপ না থাকলে এ ধরনের সমঝোতা পূর্ণাঙ্গতা পায় না। বৈঠকের একপর্যায়ে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমান একান্তে আলোচনা করেন। পরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও অন্যরা সংবাদ সম্মেলনে যৌথ বিবৃতি পাঠ করেন। বিবৃতিতে জানানো হয়, দু’পক্ষই আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত। তবে বিচার ও সংস্কারের বিষয়েও যথাযথ অগ্রগতি থাকতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে আমীর খসরু বলেন, “নির্বাচনের আগে ও পরে, একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।” তবে তিনি জুলাই সনদ বা নির্বাচন কমিশন সংস্কার নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান জানান, নির্বাচন কমিশন শিগগিরই সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে পারে। ঢাকায় দলের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বৈঠককে “দৃষ্টান্তমূলক” বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, বৈঠকের পর তারেক রহমান তাঁকে ফোন করে নেতাকর্মীদের অভিনন্দন ও খালেদা জিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, “যেখানে সবকিছু অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছিল, সেখান থেকে জাতিকে আবার স্বপ্ন ও সম্ভাবনার পথে ফিরিয়ে এনেছেন এই দুই নেতা।” তারেক রহমানের দেশে ফেরা বা শেখ হাসিনার বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা না হলেও, যৌথ বিবৃতিতে “বিচার ও সংস্কারে অগ্রগতি”র কথা থাকায় এটি ভবিষ্যতের দিক নির্দেশ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলের এই সম্মিলিত বার্তা কেবল নির্বাচনের সময়সূচিই নয়, বরং সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশে এক নতুন মোড় আনতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।